রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ নতুন নয়। দলের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও মুসলিম তোষণের অভিযোগ একাধিকবার উঠেছে। সেই প্রেক্ষিতে আবার তাঁর 'দুধেল গাই' মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইদানীং মুসলিম নামেও সম্বোধন করা হচ্ছে?
এমন প্রশ্নের অবতারণা হওয়ার কারণ-সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ছবি। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকজন মহিলা কর্মী হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার ধরে রয়েছে। যেই ব্যানারে লেখা হয়েছে, "সভানেত্রী-মমতাজ বেগম।" নীচে লেখা, "৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস পালন করুন।"
ছবিটি শেয়ার করে সোশ্য়াল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের একাংশ ক্যাপশনে লিখেছেন, "মুসলিম হয়ে গেল মমতা ব্যানার্জী।" এই পোস্টের আর্কাইভ লিঙ্ক এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্য়াক্ট চেক টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ছবিতে যার নাম রয়েছে মমতাজ বেগম, তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও সম্পর্ক নেই। বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য়ি
সবার প্রথম ভাইরাল ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজার পর আমরা ওই ছবিটি ছবিটি প্রিয় বন্ধু বাংলা নামের একটি ওয়েব পোর্টালে দেখতে পাই। সেখানে ওই একই ছবি প্রকাশ করে একটি প্রতিবেদন লেখা হয় যার শিরোনাম ছিল, "মুখ্যমন্ত্রীর নাম 'মমতাজ বেগম'? পিছনে আসল সত্যিটা কি?"
এই প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়। যেমন মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে 'দলনেত্রী' বিশেষণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এখানে 'সভানেত্রী' কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। যা থেকে আন্দাজ করা যেতে পারে এ ক্ষেত্রে মমতাজ বেগম নামটি মুখ্য়মন্ত্রীকে সম্বোধন করে লেখা হয়নি। সেই সঙ্গে, মুসলিমদের মধ্যে বেগম তাদেরই বলা হয় যারা বিবাহিত।
ওই ব্যানারটি ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেখানে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লক মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি কথাটি লেখা রয়েছে। এর থেকে আরেকটি বিষয় আন্দাজ করা যায় যে, মমতাজ বেগমের সঙ্গে মালদার অন্তর্গত হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লক মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও সংযোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই বিষয়ে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করার পর এবিপি আনন্দ লাইভের একটি খবর দেখা যায়। ২০২৩ সালের ২১ জুনের এই খবরে লেখা হয় যে মালদার জেলা পরিষদের সদস্যা মমতাজ বেগম, তাঁর স্বামী তৃণমূল নেতা আমিনুল হক, হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আদিত্য মিশ্র-সহ প্রায় ২০০ জন নেতা, কর্মী তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করেন।
সেই সঙ্গে আমরা হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক মোস্তাক আলমের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পাই। সেখানে মমতাজ আলম ও তাঁর স্বামী-সহ বাকি নেতা-কর্মীদের কংগ্রেসে যোগদান করতে দেখা যায়।
এ ছাড়াও আমরা যোগাযোগ করি হরিশ্চন্দ্রপুরের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক ও রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেনের সঙ্গে। তিনিও আমাদের জানান যে এই মমতাজ বেগমের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও সংযোগ নেই। এক সময় তৃণমূলে থাকা এই নেত্রী এখন কংগ্রেসে রয়েছেন।
অর্থাৎ, অসম্পর্কিত একটি ছবিকে বিভ্রান্তিকর দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের একটি ব্যানারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'মমতাজ বেগম' বলে সম্বোধন করা হচ্ছে।
এখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নয়, বরং মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের এক তৎকালীন তৃণমূলের নেত্রীকে সম্বোধন করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। এই ছবিটি ২০১৮ সালের মার্চ মাসে।