২৬ মে রাতে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে হানা দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা অনেকটাই কমাতে সাহায্য করেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। দুর্যোগ কেটে গিয়েছে, গরম অল্প বাড়লেও এখন তা যথেষ্ট সহনীয়। এরই মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হচ্ছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে, নাসা জানিয়েছে নওতাপ-এর জেরে ২৫ মে থেকে শুরু করে পরবর্তী ১৫ দিন সবচেয়ে বেশি গরম পড়বে।
জ্যোতিষের ভাষায় নওতাপ সেই সময়কে বলা হয় যখন সূর্য রোহিনী নক্ষত্রে প্রবেশ করে। সেই সময়ে নাকি পৃথিবীর উষ্ণতা সবচেয়ে বেশি হবে।
ফেসবুকে একাধিক সূর্যের প্রতীকী ছবি পোস্ট করে এর সঙ্গে ক্য়াপশনে লেখা হয়েছে, "আসছে নওতাপ ২০২৪। NASA রা জানিয়েছেন যে আগামী ২৫ মে থেকে শুরু হবে নওতাপ। এই সময় সূর্য যেন আগুন ছড়াতে শুরু করবে পৃথিবীর বুকে। সূর্য প্রতি বছর যে সময় রোহিণী নক্ষত্রে অবস্থান করে, সেই সময়টায় সবেচেয়ে বেশি গরম পড়ে। আগামী ২৫ মে সকাল ৩টে ১৬ মিনিটে সূর্য রোহিণী নক্ষত্রে প্রবেশ করবে। ১৫ দিন রোহিণী নক্ষত্রে অবস্থান করে মৃগশিরা নক্ষত্রে গোচর করবে সূর্য। রোহিণী নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থানের এই ১৫ দিন সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হয়। *সূর্য রোহিণী নক্ষত্রে ১৫ দিন থাকলে তার মধ্যে প্রথম ৯ দিন গরম সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই ৯ দিনকে নওতাপ বলা হয়। এই নওতাপ চলবে আগামী ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত।" (ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই দাবিটি আংশিক ভুল। নওতাপ কোনও বৈজ্ঞানিক নয় বরং একটি জ্যোতিষ ধারণা। নাসাও এই নিয়ে কিছুই জানায়নি।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
এই তথাকথিত নওতাপের বিষয়ে সতর্কতাস্বরূপ নাসা যদি কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করে থাকত, তবে অবশ্যই এই নিয়ে নানা সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ পাবে। সেই সঙ্গে, নাসার ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল, কোথাও একটা এই সংক্রান্ত তথ্য থাকবে। কিন্তু, এমন কোনও তথ্য নাসার কোথাও-ই সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
এরপর আমরা যখন এই বিষয়ে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করি, তখন হুবহু একই শব্দ ও বাক্যবন্ধে লেখা এই সময়ের একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। প্রতিবেদনের একটি অংশে দেখা যায়, "জ্যোতিষীরা জানিয়েছেন..." দিয়ে একটি বাক্য শুরু হচ্ছে। সেই অংশের বাকি লেখা হুবহু ভাইরাল পোস্টের সঙ্গে মিলে যায়। শুধু জ্যোতিষীরা জানিয়েছেন কথাটি বদলে দিয়ে ফেসবুক পোস্টে "NASA রা জানিয়েছেন" বলে লেখা হয়েছে।
এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্তার সঙ্গে। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি আমাদের জানান যে, জ্যোতিষ মতে নানা গ্রহ উপগ্রহের আবহওয়ার উপর প্রভাবের বিষয়টি প্রচলিত হয়ে এলেও এই মুহূর্তে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যাতে বলা যায় আগামী ক'দিন পশ্চিমবঙ্গবাসী অন্তত উষ্ণতম আবহাওয়ার সাক্ষী থাকবে।
পক্ষান্তরে তিনি জানান, আগামী কয়েকদিন উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা কমবেশি স্বাভাবিকের মধ্যেই থাকবে। বরং চলতি সপ্তাহের শেষে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে নাসার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে যে পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে তা সত্যি নয়।
NASA জানিয়েছে যে আগামী ২৫ মে থেকে পরের ১০ দিন নওতাপের সময় পৃথিবীর উষ্ণতা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাবে।
NASA-র পক্ষ থেকে এমন কোনও তথ্য জানানো হয়নি। দাবিটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন।