scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: কেবলমাত্র মুসলিম পড়ুয়াদের স্কলারশিপ দেয় মালাবার গোল্ড কোম্পানি? সত্যিটা জানুন

সম্প্রতি বোরখা পরা কিছু ছাত্রীর একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মালাবার গোল্ড ও ডায়মন্ডস কোম্পানি কেবলমাত্র মুসলিম পড়ুয়াদের স্কলারশিপ প্রদান করে। হিন্দু-সহ অন্য ধর্মের পড়ুয়াদের তারা স্কলারশিপ দেয় না।

Advertisement

শিক্ষাক্ষেত্রে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন সময় স্কলারশিপ দিয়ে থাকে সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা। আর এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে মূলত মেধা ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর ভিত্তিতে। আবার অনেক সময় জাতিগত দিক বিবেচনা করেও দেওয়া হয়ে থাকে স্কলারশিপ। 

তবে এই সবের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে স্কলারশিপ দেওয়ার দাবি সংক্রান্ত একটি ছবি। ছবিটিতে বেশ কয়েকজন বোরখা পরা মেয়েকে হাতে একটি ফাইল বা চেক জাতীয় কিছু নিয়ে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাদের পিছনের ব্যানার থেকে এটা স্পষ্ট যে মালাবার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তরফে মেয়েদের স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে এই ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মালাবার গোল্ড ও ডায়মন্ডস কোম্পানির ৯৯.৯ শতাংশ গ্রাহক হিন্দু। কিন্তু তারা কেবলমাত্র মুসলিম পড়ুয়াদের স্কলারশিপ দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, “মালাবার গোল্ড কোম্পানির 99.9% গহনা হিন্দুরা কিনেছে! কিন্তু এই ছবি অনুযায়ী এই কোম্পানি স্কলারশিপ  ১০০% দেয় শুধুমাত্র মুসলিম শিশুদের জন্য! হিন্দুরা, এবার তো জেগে ওঠো!” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে মালাবার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তরফে কোনও স্কলারশিপ দেওয়া হয় না। বরং মেধা ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর ভিত্তিতে সমজের সব শ্রেণির ছাত্রীদের এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে আমরা এই সংক্রান্ত একধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা মালাবার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই স্কলারশিপ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ও ১৩টি মানদণ্ড দেখতে পাই। তার প্রথমটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, "স্কলারশিপটি কেবলমাত্র ছাত্রীদের জন্য"। অন্যদিকে পঞ্চম পয়েন্টে বলা হয়েছে, "স্কলারশিপ শুধুমাত্র মেরিট অ্যান্ড মিন্স বেসিস'-এর ভিত্তিতে স্কলারশিপ দেওয়া হবে।।" কিন্তু ওই সেখানে ধর্মের কোনও উল্লেখ নেই।

Advertisement

এরপর আমরা মালাবার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের অ্যালবাম সেকশনে স্কলারশিপ প্রদানের অপর একটি ছবি দেখতে পাই। এক্ষেত্রে ছাত্রীদের স্কুলের পোশাক পরে স্কলারশিপ নিতে দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউই হিজাব পরে নেই।

এরপর আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি মালাবার গোল্ড ও ডায়মন্ডস কোম্পানির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে মালাবার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তরফে স্কলারশিপ প্রদান সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো খুঁজে পাই। ৩ মিনিট ১১ সেকেণ্ডের সেই ভিডিয়োর ১ মিনিট ৩ সেকেণ্ডে আমরা ভাইরাল ছবিটি দেখতে পাই। তবে একই ফ্রেমে ভাইরাল ছবিটির পাশাপাশি আমরা অপর একটি ছবিতে হিজাব ছাড়াই কিছু ছাত্রীকে স্কলারশিপ নিতেও দেখতে পাই।

ওই একই ভিডিয়োর ১৬ সেকেণ্ডে আমরা স্কলারশিপ পাওয়ার একটি শর্তাবলী লক্ষ্য করি। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, স্কলারশিপটি জাতি ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণির গরীব মেধাবী ছাত্রীদের প্রদান করা হয়।

এরপর এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা মালাবার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের স্কলারশিপ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার সাবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের বলেন, “ভাইরাল দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যে। মালাবার চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ধর্মের ভিত্তিতে কোনও স্কলারশিপ দেয় না। আমরা স্কলারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রীদের মেধা ও পারিবারিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে গুরত্ব দিই। এই স্কলারশিপ কেবলমাত্র মুসলিম নয়, বাকি সব ধর্মের ছাত্রীদেরও দেওয়া হয়।”

একই সঙ্গে তিনি আমাদের জানান ভাইরাল ছবিটি ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি ম্যাঙ্গালোরের টাউন হলে আয়োজিত স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে তোলা হয়। এবং বোখরা পরা যে ছাত্রীদের ভাইরাল ছবিতে দেখা যাচ্ছে তারা সকলেই কর্ণাটকের উপ্পিনগাডির সরকারি পিইউ কলেজের ছাত্রী। পাশাপাশি তিনি ম্যাঙ্গালোরের টাউন হলে আয়োজিত স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠানের একটি পিডিএফ আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন। সেই পিডিএফ থেকে আমরা জানতে পারি ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারির ওই অনুষ্ঠানে ৬০টিরও বেশি কলেজের মোট ৬৩০ জন ছাত্রীকে স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। সেই পিডিএফে আমরা প্রায় ২৯টি ছবি দেখতে পাই। তার মধ্যে সহ ছাত্রীরা বোরখা পরে আছে এমন ছবি ছিল ৩টি। যার মধ্যে ভাইরাল ছবিটিও ছিল। এছাড়া কেউ বোরখা পরে নেই এমন ছবি ছিল ৫টি। এবং বাকি ছবিগুলিতে বোরখা এবং সাধারণ স্কুলের পোশাকে ছাত্রীদের দেখা গেছে।

সবশেষে ম্যানেজার সাবীর আমাদের জানান, মালাবার চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে নিয়ে ছড়ানো এই সংক্রান্ত মিথ্যে দাবির বিরুদ্ধে আমরা বোম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। গত ৯ মে বোম্বে হাইকোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এই মিথ্যে দাবি সংক্রান্ত সব পোস্ট ডিলিট করার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৬ মে আমরা বোম্বে হাইকোর্টের সেই নির্দেশের বিস্তারিত তথ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের একটি প্রতিবেদেনও খুঁজে পাই। 

এর থেকে প্রমাণ হয় মালাবার গোল্ড ও ডায়মন্ডস কোম্পানি কেবলমাত্র মুসলিম পড়ুয়াদের স্কলারশিপ প্রদান করে বলে যে দাবি করা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

কেবলমাত্র মুসলিম পড়ুয়াদের স্কলারশিপ প্রদান করে মালাবার গোল্ড ও ডায়মন্ডস কোম্পানি।

ফলাফল

জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে মালাবার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তরফে কোনও স্কলারশিপ দেওয়া হয় না।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement