scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: হিজড়াদের ট্রেনে ওঠার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি রেল, জানুন আসল নিয়ম

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে, হিজড়াদের সমস্ত লোকাল ও দুরপাল্লার ট্রেনে ওঠার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রেল।

Advertisement

লোকাল অথবা দুরপাল্লার ট্রেনে হিজড়া বা বৃহন্নলাদের তরফে যাত্রী হয়রানের অভিযোগ নতুন নয়। বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে এদের উৎপাতের খবর। দাবি মতো টাকা না দিলে আপত্তিকর ভাষা ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি তো রয়েছে। তাছাড়াও এদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের শারীরিক হেনস্থার অভিযোগও ভুরি ভুরি।

তবে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় হিজাড়াদের ট্রেন যাত্রা সংক্রান্ত একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, হিজড়াদের সমস্ত লোকাল ও দুরপাল্লার ট্রেনে ওঠার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রেল। 

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী দুরপাল্লার ট্রেনের একটি ছবি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে লিখেছেন, “সমস্ত দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেনে হিজড়া দের উঠা কঠিন ভাবে নিষিদ্ধকরণ করলো রেলওয়ে। ঠিক হলো না ভুল। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি..?” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন। এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, হিজড়াদের ট্রেনে ওঠার উপর রেলের নিষেধাজ্ঞা জারি সংক্রান্ত দাবিটি ভুয়ো। রেল এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথমত, ট্রেনে হিজাড়াদের উৎপাত যাত্রীদের জন্য একটি অন্যতম সমস্যার কারণ। তাই রেল যদি তাদের ট্রেনে ওঠার উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাহলে সেটি একটি বড় খবর। আর সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই প্রথম শ্রেণির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি যা থেকে এর সত্যতা প্রমাণ হয়।

তবে ট্রেনে হিজাড়াদের তরফে যাত্রী হয়রান সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চে আমরা ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল আনন্দবাজার অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “একটি আরটিআই-এর জবাবে রেল জানিয়েছে, গত চার বছরে ৭৩ হাজার ৮৩৭ জন হিজড়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০১৫ তে ১৩ হাজার ৬৪৬ জন, ২০১৬ তে ফ ১৯ হাজার ৮০০ জন, ২০১৭তে ১৮ হাজার ৫২৬ জন ও ২০১৮তে ২০ হাজার ৫৬৬ জন।”

Advertisement

অন্যদিকে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চে ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি আমরা তেলেঙ্গানা টুডের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “ট্রেনে যাত্রীদের উপদ্রব করার জন্য দেশজুড়ে ১২০০ হিজড়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।”

এরপর আমরা ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ট্রেনে হিজাড়াদের উপদ্রব নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও যাত্রী যদি ট্রেন হিজাড়াদের দ্বারা হয়রানির শিকার হন সেক্ষেত্রে ১১২ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে হবে। অভিযোগ পেলে জিআরপি তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

 

এরপর আমরা ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল দক্ষিণ রেলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ট্রেনে  হিজাড়াদের উপদ্রব সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেখেতে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিজাড়াদের তরফে যাত্রী হয়রানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রেল। আগামীতেও এই ধরনের অভিযান জারি থাকবে। 

উপরে উল্লেখিত সব প্রতিবেদন বা রেলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ট্রেনে হিজাড়াদের উপদ্রবের বিরুদ্ধে রেলের ব্যবস্থা গ্রহণের তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু সেগুলিতে হিজড়াদের ট্রেনে ওঠার উপরে রেলের নিষেধাজ্ঞা জারি করা সংক্রান্ত কোনও তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। আর এর থেকেই আমাদের সন্দেহ হয় যে এই সংক্রান্ত দাবিটি ভুয়ো হতেও পারে।

তাই এরপর আমরা এ বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন তিনি আমাদের জানান, “এই দাবিটি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন। রেল কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তবে কেউ যদি বিনা টিকিটে ট্রেনে যাতায়াত করে তাহলে সেটি অপরাধ। কিন্তু বৈধ টিকিট-সহ যে কেউ ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন। তবে হিজড়ারা যদি ট্রেনে কোনও যাত্রীকে হেনস্থা করে থাকে। তাহলে সেই সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে রেল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে হিজড়াদের ট্রেনে ওঠার উপরে রেলের নিষেধাজ্ঞা জারি করা সংক্রান্ত দাবিটি মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

হিজড়াদের ট্রেনে ওঠার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রেল।

ফলাফল

হিজড়াদের ট্রেনে ওঠার উপর রেলের নিষেধাজ্ঞা জারি সংক্রান্ত দাবিটি ভুয়ো। রেল এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement