scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনে নিহতদের লাশের সারি দাবিতে ভাইরাল ইন্দোনেশিয়ার পুরনো ছবি

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের লাশের সারির দৃশ্য।

Advertisement

সম্প্রতি কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। যার ফলে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। পাশাপাশি এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একের পর এক হিংসা ও মৃত্যুর ঘটনাও সামনে এসেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র খবর সেই মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে শতাধিক। এরমধ্যে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা তুলে মাত্র ৭ শতাংশ করার নির্দেশ দিয়েছে। 

তবে এই সবের মধ্যে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একাধিক মানুষ সারিবদ্ধ অবস্থায় মৃতদেহের মতো শুয়ে আছেন। আর তাদের শরীর কাফন জাতীয় সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা এবং সেই কাপড়ের উপরে কিছু লেখা বা নকশা করা রয়েছে। ছবটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের মৃতদের দৃশ্য। 

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, “এটা somoy টিভি সম্প্রচার করতে পারে না? এটা গা/জা বা রা/ফাহ নয়। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আহ আমার সোনার বাংলা” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন। এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ছবিটি বাংলাদেশের নয় বরং সেটি ইন্দোনেশিয়ার বালির স্থানীয় একটি সংস্কৃতির দৃশ্য। পাশাপাশি ছবির লাশগুলি আসল নয়। তারা প্রত্যেকেই জীবিত এবং মৃতের অভিনয় করছেন। 

কীভাবে জানা গেল সত্য? 

ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে আমরা তথাকথিত বাংলাদেশের ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে নিহতদের লাশের ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর ডেলিমোশনে ভাইরাল ছবির ফ্রেমের সঙ্গে হুবহু মিল থাকা একটি ভিডিয়ো দেখতে পাই। সেই ভিডিয়োর ডেসক্রিপশন থেকে আমরা জানতে পারি, সেটি বালিতে আয়োজিত ‘ওয়াটাঙ্গন মাতাহ’ বা ‘মৃতদেহ মাতাহ’ নামে পরিচিত স্থানীয় একটি অনুষ্ঠান বা রীতির ভিডিয়ো। যে অনুষ্ঠানে স্থানীয়রা নিজেদের ইচ্ছায় মৃতদেহের অভিনয় করেন।

Advertisement

এরপর আমরা ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক দুটি ফেসবুক পেজ, Info Tabanan ও Info Bali Terkini-তেও এই একই ভিডিয়ো দেখতে পাই। সেই ভিডিয়োর ক্যাপশন থেকেও আমরা জানতে পারি, সেটি ইন্দোনেশিয়ার বালির তাবানান নামক এলাকায় আয়োজিত একটি ঐতিহ্যবাহী রীতি পালন অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো। 

এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে আমরা পুনরায় একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন  আমরা ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর বালি ট্রিবিউনে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি, ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার বালি অঞ্চলের তাবানন গ্রামের কেতুত মারিয়া আর্ট বিল্ডিংয়ে এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। যেখানে অনুষ্ঠানের রীতি অনুযায়ী স্থানীয় ১০৮ জন মৃত মানুষের মতো সারিবদ্ধ অবস্থায় শুয়ে ছিলেন। যাদেরকে স্থানীয় ভাষায় ‘ওয়াটানগান’ বলা হয়। পুরো বিষয়টিকে বাস্তবরূপ দেওয়ার জন্য তাদের গলা পর্যন্ত সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এবং যে কাপড়ে মন্ত্র লেখা ছিল। ইন্দোনেশিয়ান যুব জাতীয় কমিটি (কেএনপিআই) ও মান্দালা সুচি ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এই পুরো অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।

এরপর আমরা ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর অপর এক ইন্দোনেশিয়ান গণমাধ্যম Potensibadung-এর একটি প্রতিবেদন থেকে ‘ওয়াটানগান’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারি। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ওয়াটানগান তাদের বলা হয় যারা মৃতদেহ হিসাবে অভিনয় করেন। এই ধরনের মানুষদের প্রথমে স্নান করানো হয়, তারপর তাদের প্রকৃত মৃত মানুষের মতো সাজানো হয় এবং জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী ওয়াটানগানের ধারণা বা প্রথাটি তাদের দুর্ভাগ্য ও পাপ দূর করতে সাহায্য করে।

এরপর আমরা ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর Pande Bali নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে এই পুরো অনুষ্ঠানের একটি ভিডিয়ো খুঁজে পাই। সেই ভিডিয়োতে আমরা যারা ওয়াটানগান সেজেছেন তাদেরকে দাঁড়িয়ে, বসে অথবা শুয়ে থাকতে দেখতে পাই। পাশাপাশি অন্যরা তাদের শরীর সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন সেটাও লক্ষ্য করি।

এর থেকে প্রমাণ হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের মৃতদের দৃশ্য দাবিতে ভাইরাল ইন্দোনেশিয়ার বালির স্থানীয় সংস্কৃতির ছবি।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের লাশের সারি।

ফলাফল

ভাইরাল ছবিটি বাংলাদেশের নয় বরং সেটি ইন্দোনেশিয়ার বালির স্থানীয় একটি সংস্কৃতির দৃশ্য। পাশাপাশি ছবির লাশগুলি আসল নয়। তারা প্রত্যেকেই জীবিত এবং মৃতের অভিনয় করছেন।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement