এবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কেন্দ্র করে একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হলো।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি হৃৎপিণ্ডের ছবি পোস্ট করে দাবি করেছেন যে ছবিটি শ্রীকৃষ্ণের হৃৎপিণ্ডের। তাঁর দাবি, মৃত্যুর পর শ্রীকৃষ্ণকে যখন দাহ করা হচ্ছিল তখন তাঁর হৃৎপিণ্ড নষ্ট হয়ে যায়নি।
আর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ছবিটি পোস্ট করে দাবি করেছেন যে এই হৃৎপিণ্ডটি বর্তমানে পুরির জগন্নাথ মন্দিরে অধিষ্ঠ রয়েছে। প্রতি ১২ বছর বাদে যখন পুরির মন্দিরের মূর্তি বদল করা হয় তখন এই বস্তুটি পুরোনো মূর্তি থেকে বের করে নতুন মূর্তিতে রাখা হয়।
একই দাবি সহ পোস্টের আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর।
ছবিটি কোথাকার?
তদন্তে নেমে আমরা প্রথমে রিভার্স সার্চ করে ছবিটি একটি বিদেশি ওয়েবসাইটে খুঁজে পাই।
কুল হান্টিং নামের সেই ওয়েবসাইটে এই ছবিটি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে, এই হৃৎপিণ্ডের প্রতিরূপটি নামের একটি গ্যালারির সিলিং-এ ঝুলতে দেখা যায়। প্রখ্যাত রুশ শিল্পী দিমিত্রি সাইকালোভ এই প্রতিরূপটি নির্মাণ করেছেন।
এছাড়া আমরা রেডিট ও ইনস্টাগ্রাম ওয়েবসাইটে একই দাবি সহ এই ছবিটি পেয়েছি।
শ্রী কৃষ্ণের হৃৎপিণ্ড
প্রতি ১২ থেকে ১৯ বছর ব্যবধানে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে নবকলেবর বলে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
এই অনুষ্ঠানে জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা ও সুদর্শনের মূর্তিগুলো পরিবর্তন করে নতুন মূর্তি বসানো হয়ে থাকে। কথিত আছে, এই পরিবর্তনকালে চারজন বাধাগ্রহী এই চারজন দেব-দেবীর আত্মা নতুন মূর্তিতে প্ৰতিষ্ঠিত করে।
শেষ বার, ২০১৫ সালে এই নবকলেবর উৎসব উদযাপন করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, কথিত আছে যে মহারাজ প্রদ্যুম্ন (যিনি জগন্নাথ মন্দির স্থাপন করেছিলেন) একদিন নদীর জলে স্নান করতে করতে একটি নরম লোহার টুকরো ভেসে যেতে দেখেন ইন্দ্রদ্যুম্ন।
লোহার টুকরোটি হাতে নিতেই স্বয়ং বিষ্ণু তাঁর কানে ফিসফিস করে বসেন যে এই হৃদয় তাঁরই। এই পৃথিবীতে এটি বরাবর থাকবে। দ্রুত জগন্নাথ মন্দিরে এসে জগন্নাথ দেবের মুর্তির মধ্যেই তা স্থাপন করেন ইন্দ্রদ্যুম্ন। কিন্তু তা এমন ভাবে করা হয়, যাতে তা কেউ দেখতে না পায়।
সুতরাং, সব মিলিয়ে, এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর বলাই যেতে পারে। এই হৃৎপিণ্ডের ছবিটির সঙ্গে পুরীর জগন্নাথ দেব মন্দিরের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি একটি রুশ শিল্পীর নির্মাণ করা কাঠের হৃৎপিণ্ড।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হৃৎপিণ্ড।
ছবিটি দিমিত্রি সাইকালোভ নামের এক রুশ শিল্পীর তৈরি কাঠের হৃৎপিণ্ডের প্রতিরূপ। বর্তমানে এটি প্যারিসের একটি গ্যালারিতে রয়েছে।