১৯৯০-এর দশকে কাশ্মীরে জাতিগত হিংসার কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছিল বহু কাশ্মীরি পণ্ডিতকে। আর সেই হিংসার জেরে অনেকেই রাতারাতি নিজেদের ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস শুরু করেন তারা।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে কাশ্মীরে ঘটা তেমনই একটি মর্মান্তিক ঘটনা সংক্রান্ত পোস্ট। সেখানে একজন মহিলার ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে যে ছবির মহিলাটি হলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের গৃহবধূ। তাঁকে জীবিত অবস্থায় তাঁর শরীর দু-টুকরো করে হত্যা করা হয়েছিল।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবিটি পোস্ট করে লিখেছেন, “এনাকে চিনতে পারছেন? ইনিই কাশ্মীরি পন্ডিত পরিবারের পুত্র_ বধূ ছিলেন। এনাকে জীবিত অব_স্থায় করাত দিয়ে দু_ভাগে কে টে ফে লা হয়েছিল। অন্ধ হিন্দু গুলো ভাল মতো দেখে নাও ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু মেয়েদের ভবিষ্যৎ।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে। একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, বাস্তবে গিরিজা টিক্কু নামক এক মহিলাকে দু-টুকরো করে হত্যা করা হয়েছিল। দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমায় সেই চরিত্রেই অভিনয় করেন অভিনেত্রী ভাষা সুম্বলি। ভাইরাল পোস্টে তাঁর ছবিই ব্যবহার করা হয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ছবিটির সত্যতা জানতে আমরা সেটিকে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমার অভিনেত্রী ভাষা সুম্বলির ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই একই ছবি দেখতে পাই। সেখানে তিনি ভাইরাল ছবিটি-সহ আরও একাধিক ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমা, “যেখানে আমি শারদা পণ্ডিত চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সেই চরিত্রটি নার্গিস দত্ত পুরস্কার জিতেছে।” ভাষা সুম্বলির ওই ইন্সটাগ্রাম পোস্ট থেকে আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাইরাল ছবিটি দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমায় তাঁর অভিনীত শারদা পণ্ডিতের।
এরপর আমরা ভাইরাল দাবি এবং দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমায় ভাষা সুম্বলির অভিনীত চরিত্র সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করি। তখন আমরা ২০২২ সালের ২০ মার্চ টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি, সিনেমার শেষ দৃশ্যে শারদা পণ্ডিতের চরিত্রকে গণধর্ষণ করা হয় এবং একটি কাঠমিস্ত্রির করাত দিয়ে তাঁকে জীবিত কেটে ফেলা হয়। ওই প্রতিবেদন থেকে আমরা আরও জানতে পারি যে পর্দায় শারদা পণ্ডিতের সঙ্গে যে ঘটা মর্মান্তিক দৃশ্যটি দেখানো হয়েছে সেটি আসলে ১৯৯০ সালে গিরিজা টিক্কু নামক এক কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের গৃহবধূর সঙ্গে ঘটেছিল। আর সেই ঘটনাটিই দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমায় ফুটিয়ে তোলেন ভাষা সুম্বলির চরিত্র শারদা পণ্ডিত।
এরপর ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট নিউজ-২৪-এর একটি প্রতিবেদনে আমরা এবিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারি। সেই প্রতিবেদনে দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমায় ভাষা সুম্বলির চরিত্র শারদা পণ্ডিতের পাশাপাশি গিরিজা টিক্কুর একটি ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। এবং সেখানে লেখা হয়েছে, গিরিজা টিক্কু কাশ্মীরের বান্দিপোরার পণ্ডিত পরিবারের একজন গৃহবধূ ছিলেন। তিনি একটি সরকারি স্কুলে সহকারী পরীক্ষাগার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯০ সালের জুন মাসে তাঁকে প্রথম ধর্ষণ ও পরে তাঁর শরীর দু-টুকরো করে কেটে হত্যা করা হয়।
এই একই তথ্য আমরা ২০২২ সালের ১৬ মার্চ নিউজ ভারতীর একটি প্রতিবেদনে। সেখানে নিজের পরিবারের সঙ্গে গিরিজা টিক্কুর একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমার শেষ দৃশ্যে শারদা পণ্ডিতের সঙ্গে ঘটা ঘটনাটি বাস্তব ও সত্য। যেটি গিরিজা টিক্কু নামক এক মহিলার সঙ্গে ঘটেছিল।
এর থেকে প্রমণিত হয় ভাইরাল পোস্টে যে দাবি করা হচ্ছে সেটি বাস্তবে গিরিজা টিক্কু নামক এক কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের গৃহবধূর সঙ্গে ঘটেছিল। আর সেই বস্তব ঘটনাকেই দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমায় ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রী ভাষা সুম্বলির চরিত্র শারদা পণ্ডিত। আর তাঁর ছবিই ভাইরাল পোস্টে গিরিজা টিক্কুর বদলে ব্যবহার করা হয়েছে।
ছবির মহিলাটি হলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের গৃহবধূ। তাঁকে জীবিত অবস্থায় তাঁর শরীর দু-টুকরো করে হত্যা করা হয়েছিল।
বাস্তবে গিরিজা টিক্কু নামক এক মহিলাকে দু-টুকরো করে হত্যা করা হয়েছিল। দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমায় সেই চরিত্রেই অভিনয় করেন অভিনেত্রী ভাষা সুম্বলি। ভাইরাল পোস্টে তাঁর ছবিই ব্যবহার করা হয়েছে।