গণঅভ্যুত্থানের কারণে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তড়িঘড়ি আকাশপথে দেশ থেকে পলায়ন করেন তিনি। প্রথমে হেলিকপ্টরে আগরতলা ও পরে বাংলাদেশ বায়ুসেনার একটি বিমানে করে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে ভারতীয় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পৌঁছন তাঁরা। তারপর থেকেই হাসিনা ভারতেই আছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রের খবর।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, বাংলাদেশের প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা তথাকথিত একটি মন্তব্য। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি শুরু হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শেখ হাসিনা উভয়ের ছবি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন. শেখ হাসিনা প্রবেশের পরে থেকেই ভারতে অশান্তি শুরু হয়েছে।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল দাবিটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। উভয়ই নিজের নিজের দেশে তথা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও যথেষ্ট প্রভাশালী রাজনীতিবীদ। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও প্রকার মন্তব্য করলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই জতীয় তথা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত হত। কিন্তু আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে এই সংক্রান্ত কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে এর সত্যতা প্রমাণ হয়।
পক্ষান্তরে কিওয়ার্ড সার্চের সময় আমরা গত ২১ জুলাই এবিপি আনন্দের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন গত ২১ জুলইয়ের সভামঞ্চ থেকে পড়শি দেশ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে কেউ এলে আশ্রয় দেওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের মানুষ দরজায় কড়া নাড়লে আমরা আশ্রয় দেব।"
এরপর আমরা শেখ হাসিনার পদত্যগের পর গত ৫ আগস্ট নিউজ-১৮ বাংলার একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠে এল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা, ‘বাংলাদেশ নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করবেন না। ফেসবুক বা কোনও জায়গায় কিছু পোস্ট করবেন না। যা বলার ভারত সরকার বলবে৷ কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যা জানাবেন, তাই আমরা করব।’
এরপর আমরা গত ১৪ আগস্ট আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য সংক্রান্ত আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আরজি করের ঘটনা নিয়ে সিপিএম এবং বিজেপি রাজনীতি করছে। বাংলাদেশে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। অনেকে ভাবছেন, বাংলাদেশের ঘটনা টেনে এনে এখানেও ক্ষমতা দখল করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আমি ক্ষমতার মায়া করি না। যত দিন বাঁচব, মানুষকে ন্যায়বিচার এনে দেব। এই ঘটনা জানার পরেও আমি পুলিশকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা হাই কোর্টে গেলেন।’’
উপরের প্রতিটি প্রতিবেদনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য ও উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কিন্তু কোথাও তাঁকে বাংলাদেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনও কথা বলতে দেখা যায়নি। এর থেকে প্রমাণ হয় যে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা ভাইরাল মন্তব্যটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি শুরু হয়েছে।
ভাইরাল দাবিটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।