scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: মেয়েদের উত্যক্ত করায় যোগীর পুলিশের 'ডান্ডা!' না, দু'টি ঘটনাই অন্য রাজ্যের

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর দুটি ক্লিপই ভিন্ন ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত, যেগুলির একটির সঙ্গেও উত্তর প্রদেশের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রথম ক্লিপটি মহারাষ্ট্রের পারভানির এবং দ্বিতীয়টি মধ্য প্রদেশের গাদারোয়ারার।

Advertisement

সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে পুলিশকে প্রশংসা করে সোশ্যাল মিডিয়া বেশ ভাইরাল হয়েছে দুটি ভিন্ন ক্লিপ একত্রিত করে তৈরি একটি ভিডিও। ভিডিওর শুরুতেই স্কুলের পোশাক পরিহিতা কয়েকজন ছাত্রীকে রাস্তা যেতে দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে এক বাইক আরোহী তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি মেয়েকে অশালীনভাবে স্পর্শ করে এবং বাইকে করে পালিয়ে যায়। 

অন্যদিকে ভিডিওর দ্বিতীয় ক্লিপটিতে পুলিশ কান ধরা অবস্থায় এক যুবককে জনবহুল রাস্তার উপর দিয়ে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পুলিশ স্কুলে যাওয়ার সময় ছাত্রীদের উত্যক্ত করার অপরাধে এক মুসলিম ব্যক্তিকে ব্যপকভাবে মারধর করে এবং তাকে নিয়ে একটি প্যারেড বের করে।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “প্রতিদিন এইভাবে স্কুলের মেয়েদের বিরক্ত করার শিক্ষা পেল আবদুল। UP পুলিশ কি করলো তার সাথে দেখে নিন।” (সব বানান অপরিবর্তিত।)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর দুটি ক্লিপই অন্যান্য রাজ্যের ভিন্ন ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত, যেগুলির একটির সঙ্গেও উত্তর প্রদেশের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রথম ক্লিপটি মহারাষ্ট্রের পারভানির এবং দ্বিতীয়টি মধ্য প্রদেশের গাদারোয়ারার।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথম ক্লিপ: ভাইরাল ভিডিওর প্রথম ক্লিপটি সম্পর্কে জানতে সেটির কি-ফ্রেম সার্চ করলে ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ABP MAJHA-তে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে ভাইরাল ভিডিওটি-সহ মহারাষ্ট্রের পারভানি জেলায় এক কিশোরীকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর অপর এক মারাঠি সংবাদমাধ্যম ‘সকাল’ ও তাদের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটিকে পারভানি জেলা বলে উল্লেখ করেছে। 

Advertisement

এরপর এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে মারঠি ভাষায় কিওয়ার্ড সার্চ করলে গত ৯ ডিসেম্বর Deshonnati নামক একটি পোর্টালে ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “ভিডিওটিতে গত ৬ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের পারভানি জেলার বারদোলি রোড সংলগ্ন এলাকার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ওই দিন আসলাম নামক এক কলেজ পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রীকে উত্যক্ত করেছিল। পুরো ঘটনাটি সিসিটিভিতে ধরা পড়ে এবং পরবর্তীতে সেই সিসিটিভি ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। বিষয়টি নিয়ে নানালপেঠ থানায় একটি মামলাও হয় এবং পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।”

এরপর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আমরা নানালপেঠ থানার ইন্সপেক্টর চিতাম্বর কামথেওয়াডের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তাকে ভাইরাল ভিডিওটি পাঠাই। তিনি আমাদের জানান, ভিডিওটি গত ৬ ডিসেম্বর পারভানিতে তোলা হয়েছে। এই ঘটনার অভিযুক্ত যুবক মদ্যপ অবস্থায় মেয়েটির শ্লীলতাহানি করে। আমরা অভিযোগ পেয়ে তাকে গ্রেফতার করেছি। 

দ্বিতীয় ক্লিপ: ভাইরাল ভিডিওর দ্বিতীয় ক্লিপটি সম্পর্কে জানতে সেটির কি-ফ্রেম সার্চ করলে ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ‘gadarwar.wale_mp.49’ নামক একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। এখানে উল্লেখ্য গদারওয়ারা হল মধ্য প্রদেশের নরসিংহপুর জেলার একটি তহসিল। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি গদারওয়ারার একটি হত্যা মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেখানে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।

এরপর উক্ত সূত্র ধরে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে আমরা ইউটিউবে এই সংক্রান্ত কিছু ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ভাইরাল ভিডিও-সহ সেই সব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৪০ হাজার টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করে গদারওয়ারায় মধুর চৌরাসিয়া নামক এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে। এই অভিযোগে পুলিশ বিকাশ কুচবন্দিয়া নামক এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত বিকাশ নীরসের (কুচবন্দিয়া) অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে মধুরকে হত্যা করেছে। এবং তার অতীতেও অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার রেকর্ড রয়েছে।

এরপর এ বিষয়ে জানতে আমরা আজতকের নরসিংপুরের সংবাদদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনিও আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, ভিডিওটি গদারওয়ারা তোলা হয়েছিল যখন পুলিশ খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল। 

এর থেকে প্রমাণ হয়ে যায় দুটি ভিন্ন ঘটনার ক্লিপকে যুক্ত করে তৈরি করা ভিডিওর মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর দাবি করা হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

উত্তর প্রদেশ পুলিশ স্কুলে যাওয়ার সময় ছাত্রীদের উত্যক্ত করার অপরাধে এক মুসলিম ব্যক্তিকে ব্যপকভাবে মারধর এবং তাকে নিয়ে প্যারেড বার করেছে।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিওর একটি ক্লিপের সঙ্গেও উত্তর প্রদেশের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রথম ক্লিপটি মহারাষ্ট্রের পারভানির এবং দ্বিতীয়টি মধ্য প্রদেশের গদারওয়ারার।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement