ফি বছর বর্ষা এলেই বন্যার জলে ডুবে যায় ঘাটাল। এর প্রতিকার হিসেবে যে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা শোনা যায়, তার বাস্তবায়নের কোনও লক্ষ্মণ এখনও দেখা যায়নি। আর এই বছর বন্যার প্রকোপ অন্যান্য বারের তুলনায় বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যা প্লাবিত ঘাটালের নানা ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তেমনই একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে, যেখানে একটি নৌকা করে বেশ কিছু ব্যক্তিকে বন্যার মধ্যে খাবার বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হচ্ছে, এই বন্যার মধ্যে ঘাটালের সাংসদ দেব নিখোঁজ অর্থাৎ তাঁর দেখা বা খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না কিন্তু স্বয়ংসেবক সংঘ অর্থাৎ আরএসএস-র সদস্য়রা বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে তার উপর লেখা হয়েছে, "তৃণমূলের এম.পি দেব কোথায়? ঘাটালে বন্যা হয়েঠে পালিয়ে গেছে নাকি। M.P দেবকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ হয়ে গেছে।"
ভিডিও-র ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের স্বপ্ন দেখিয়ে বন্যার সময় ঘাটালের সাংসদ দেব যখন নিখোঁজ..তখন ঘাটালের ঘর বন্দি মানুষদের কাছে নৌকায় করে পৌঁছে গিয়ে ভোজন বিতরণ করছে ঘাটালের স্বয়ংসেবকরা।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছে যে ঘাটালে বন্যার সময় দেবের নিখোঁজ থাকার দাবি বিভ্রান্তিকর এবং পুরোপুরি সঠিক নয়। চলতি বন্যায় তিনি অনেকটাই সময় ঘাটালে ছিলেন।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
চলতি বছর বন্যার সময় দেব আদৌ ঘাটালে গিয়েছিলেন কিনা, তা জানতে আমরা কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন নিউজ১৮ বাংলার একটি ভিডিও প্রতিবেদন আমাদের নজরে পড়ে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হওয়া এই ভিডিও অনুযায়ী, সাংসদ দেব ঘাটাল উপস্থিত হয়ে বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।
শুধু তাই নয়, মানুষকে সচেতন থাকার পাশাপাশি তিনি প্রশাসনকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন। সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, মানুষকে চিকিৎসা, ত্রাণ এবং অন্যান্য পরিষেবা দেওয়ার বিষয় নিয়ে তিনি প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঘাটালে দেবের পরিদর্শন নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় আনন্দবাজার পত্রিকা ডিজিটালেও। সেখানে জানানো হয় যে, দেব বলেছেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ চলছে। জমি ম্যাপ করা হয়ে গিয়েছে। যাঁদের যাঁদের জমি রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে কথা চলছে। অনেকগুলো সরকারি জমি পাওয়া গিয়েছে। জবরদখল করে রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। এই বছরের শেষেই প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়ে যাবে। তারই প্রস্তুতি চলছে। এমনটাই বলেছেন তিনি।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ১৮ সেপ্টেম্বর ঘাটালে গিয়ে জানিয়েছেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন করতে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আগামী দু-বছরের মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণ হবে বলেন জানান মমতা।
পাশাপাশি ঘাটাল তৃণমূল কংগ্রেসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর একটি পোস্ট করা হয়। যেখানে একাধিক ছবিতে সাংসদ দেবকে বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখতে এবং প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতেও দেখা যায়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, "আজ ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে মাননীয় সাংসদ দীপক অধিকারী সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা।"
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে ঘাটালের বন্যা কবলিত এলাকায় দেবকে খুঁজে না পাওয়া যাওয়া বা সাংসদের নিখোঁজ থাকার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
ঘাটালে বন্যায় আরএসএসের পক্ষ থেকে খাবার বিলি করা হচ্ছে কিন্তু সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেবকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সাংসদ দেব বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখার পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বৈঠকও করেন।