সম্প্রতি ইসলাম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নবী হজরত মহম্মদকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ সামনে এসেছে মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিধায়ক নীতেশ রানে ও মহন্ত রামগিরি মহারাজের বিরুদ্ধে। তারই প্রতিবাদে গতকাল বিকালে প্রাক্তন এআইএমআইএম সাংসদ ইমতিয়াজ জলিলের নেতৃত্বে মুম্বইয়ে ‘তিরাঙ্গা সংবিধান ব়্যালি’ নামক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা। এই বিক্ষোভ মিছিলে প্রায় ১২ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে মুম্বইয়ে মুসলিমদের বিক্ষোভ সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি গাড়ির কনভয়কে অনুসরণ করে রাস্তার দুই পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন বহু মানুষ। ভিডিও শেয়ার করে সেটিকে ইমতিয়াজ জলিলের নেতৃত্বে মুম্বইয়ে নীতেশ রানে ও মহন্ত রামগিরি মহারাজের গ্রেপ্তারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভের দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “আল্লাহর রাসূল (সা:) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় রামগিরি মহারাজ ও বিজেপি বিধায়ক নীতিশ রানে যে মসজিদে ঢুকে মুসলমানদেরকে হত্যা করার কথা বলেছিল ঐ দুই কালপিটকে গ্রেফতারের দাবীতে #AIMIM আজকে মহারাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট Imtiaz jaleel #imtiyazjaleel নেতৃত্বে হাজার হাজার গাড়ির কাফেলা নিয়ে ঔরঙ্গাবাদ থেকে মুম্বই পর্যন্ত তিরঙ্গা যাত্রা। #cholomumbai” (সব বানান অপরিবর্তিত।)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি মুম্বই বা ভারতের নয় বরং সেটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দেশ তিমুর-লেস্টে বা পূর্ব তিমুরের। সেখানে গত ১০ সেপ্টেম্বর পোপ ফ্রান্সিসের সফরকালে তাঁকে দেখতে দেশটির অর্ধেকেরও বেশি জনগণ পথে নেমে আসেন।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা জানতে আমরা সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা গত ১২ সেপ্টেম্বর একটি ফেসবুক পেজেও এই একই ভিডিও দেখতে পাই। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে লেখা হয়েছে, “পোপ ফ্রান্সিসের ঐতিহাসিক সফরকালে তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন ১০০ শতাংশ ক্যাথলিক খ্রিস্টান জনবহুল দেশ তিমুর-লেস্টের জনগণ।”
এরপর উক্ত সূত্র ধরে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে আমরা গত ১০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সংস্থা এপি-র অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও দেখতে পাই। আমরা ‘About 600,000 people attend Pope Francis' Mass in East Timor’ শিরোনামের সেই ভিডিওর শেষের অংশের সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর ফ্রেমের কিছু সাদৃশ্যও দেখতে পাই। ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে এপি-র তরফে লেখা হয়েছে, “পূর্ব তিমুরের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ আনুমানিক ৬ লাখ মানুষ পোপ ফ্রান্সিসের ‘ফাইনাল মাস’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে একটি সমুদ্রতীরবর্তী পার্কে উপস্থিত হয়েছিলেন।”
এরপর পরবর্তী সার্চে আমরা গত ১০ সেপ্টেম্বর অপর এক সংবদা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে পোপ ফ্রান্সিসের পূর্ব তিমুর সফরের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “পোপ ফ্রান্সিস তিন দিনের সফরে সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্যাথলিক ক্যাথলিক খ্রিস্টান জনবহুল দেশ পূর্ব তিমুরে পৌঁছান। ভ্যাটিকান সূত্রে বলা হয়েছে, ১৩ লাখ জনসংখ্যার দেশটির অর্ধেকেরও বেশি জনগণ পোপকে স্বাগত জানাতে তাঁর ‘ফাইনাল মাস’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, গতকাল মুম্বইয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের তরফে একটি বিক্ষোভ মিছিল করা হলেও ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সেই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে ভাইরাল ভিডিও তিমুর-লেস্টে বা পূর্ব তিমুরে পোপ ফ্রান্সিসের সফরে কালে তোলা হয়েছিল।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে মুম্বইয়ে বিজেপি নীতেশ রানে ও মহন্ত রামগিরি মহারাজের গ্রেপ্তারের দাবিতে আয়োজিত মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ।
ভাইরাল ভিডিওটি মুম্বই বা ভারতের নয়। বরং সেটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দেশ তিমুর-লেস্টে বা পূর্ব তিমুরের পোপ ফ্রান্সিসের সফরের সময় তোলা হয়েছিল।