তালিবান দ্বারা কাবুল দখলের পর প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়তে মরিয়া অধিকাংশ আফগানরা। কাবুল বিমানবন্দরে তাই চলছে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। এরই মধ্যে ফেসবুকে দুটি ছবি সহ একটি পোস্ট ভাইরাল হলো যেখানে দাবি করা হয়েছে যে আফগান পুরুষেরা বাড়ির মহিলাদের ফেলে প্রাণের ভয় পালাচ্ছে।
ফেসবুকের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, " আফগানিস্তান কি শুধুই পুরুষের দেশ?
তালিবানি আতঙ্কে পুরুষদের দেশ ছাড়ার ভিড়| গুটিকয়েক মহিলা ও শিশুকে সঙ্গে এনেছেন কিছু পুরুষ| ভয়ে বিমানবন্দরে পুরুষরা বিমানের চাকা আঁকড়ে ঝুলে পড়ছেন| বিমানের পাশে দৌঁড়চ্ছেন হাজার হাজার পুরুষ| তাঁদের কি মা,স্ত্রী কিংবা সন্তান নেই? কাদের জন্য সেই সব মহিলা-শিশুদের ফেলে রেখে যাচ্ছেন? মহিলা-শিশুরা কি আসবাবপত্র সেখানে।"
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর। ভাইরাল ছবিদুটির সঙ্গে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কোনো যোগ নেই। আফগান পুরুষদের মহিলাদের ফেলে যাওয়ার দাবিটিও ঠিক নয়। বহু আফগান পরিবারকে কাবুল এয়ারপোর্টে দেশ ছাড়ার জন্য মরিয়া প্রয়াস করতে দেখা গেছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের সাহায্যে আমরা ভাইরাল দুটি ছবির সত্যতা জানতে পারি। প্রথম ছবিটি যেখানে বিমানের ভিতর যাত্রীদের দেখা যাচ্ছে সেই ছবিটি তুর্কির রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদসংস্থা আন্দুল এজেন্সীতে ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী তুর্কিতে অবৈধ আফগান অনুপ্রবেশকারীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তুর্কি থেকে বিমানে করে দেশে ফেরার সময় সেই সব আফগান মানুষের ছবি এটি।
দ্বিতীয় ছবিটি যেখানে একটি বাচ্চা মেয়েকে বই খাতা হাতে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে, আমরা এই ছবিটির ব্যাপারে একটি আরবি নিউস ওয়েবসাইটে জানতে পারি। ২০১৪ সালে ফাদি এ থাবেত নামের একজন গাজার চিত্রগ্রাহক এই ছবিটি তোলেন। সেই চিত্রগ্রাহক জানান উত্তর গাজাতে ইস্রাইলি বোমার হামলায় বিধস্ত হয়ে যায় এই বাচ্চাটির বাড়ি। সেই সময় সে কাঁদতে কাঁদতে খাতা বই হাতে বেরিয়ে আসে। চিত্রগ্রাহক সেই মুহূর্তটিকে তার ক্যামেরায় কয়েদ করেন। ইউটুবে ফাদি এ থাবেত একটি ইন্টারভিউতে এই ছবিটির ব্যাপারে বিস্তারিত বলেন। ভাইরাল এই ছবিটি নিয়ে আজতক একটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রাণ বাঁচাতে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে আফগানিস্তান ছাড়তে ব্যস্ত। কিন্তু ভাইরাল এই ছবিদুটির সঙ্গে বর্তমান আফগান পরিস্থিতির কোনো যোগ নেই।
আফগান পুরুষদের মহিলাদের ফেলে দেশ ছেড়ে পালানোর ছবি এটি।
ভাইরাল ছবিদুটির সঙ্গে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কোনো যোগ নেই। আফগান পুরুষদের মহিলাদের ফেলে যাওয়ার দাবিটিও ঠিক নয়। বহু আফগান পরিবারকে কাবুল এয়ারপোর্টে দেশ ছাড়ার জন্য মরিয়া প্রয়াস করতে দেখা গেছে।