বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে হওয়া অত্যাচার সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। আর এই সার্বিক পরিস্থির মধ্যে এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে বাংলাদেশের হিন্দু মহিলাদের সঙ্গে হওয়া ধর্ষণ সংক্রান্ত এবিপি আনন্দের একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট।
তথাকথিত সেই পোস্টে লেখা হয়েছে, “বাংলাদেশে ফের ধর্ষণের শিকার হিন্দুরা। আজকে ধর্ষণ হয়েছে ৪০ হাজার হিন্দু। #Bangladesh” পোস্টটি উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল স্ক্রিনশটটি শেয়ার করে লিখেছেন, “#ABPAnanda এটি কোন ধরনের সাংবাদিকতা? নূন্যতম বাস্তবতা বলে কিছু আছে কি এতে? দিনে ৪০ হাজার ধর্ষণ কি সম্ভব? তর্কের খাতিরে ধরে নিলেও এপারের সংবাদ মাধ্যম নিশ্চয় প্রমাণ করার দায়িত্ব টাও নেবে। নাকি শুধু মাত্র আরএসএস এর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এজেন্ট হয়ে কাজ চলছে ভেবে পাচ্ছি না।”
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, এবিপি আনন্দের ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশটটি ভুয়ো ও সম্পাদিত। এবিপি আনন্দের তরফে এমন কোনও পোস্ট বা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। এবিপি আনন্দের পক্ষ থেকেই তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল পোস্টের সত্যতা জানতে অর্থাৎ এবিপি আনন্দের তরফে ‘বাংলাদেশে ৪০ হাজার হিন্দু মহিলাকে একদিনে ধর্ষণ করা হয়েছে’ এই সংক্রান্ত কোন ফেসবুক পোস্ট কিংবা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে কিনা কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা সেই তথ্য খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু এবিপি আনন্দের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল, এক্স হ্যান্ডেল, ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ওয়েবসাইট কোথাও এই সংক্রান্ত কোনও পোস্ট কিংবা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, বাংলাদেশে একদিনে যদি ৪০ হাজার হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণ করা হয় তাহলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই আন্তর্জাতিক তথা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চে এবিপি আনন্দ তো নয়ই, এমনকি অন্য কোনও সংবাদমাধ্যমেও এহেন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এর থেকেই সন্দেহ তৈরি হয় যে, এবিপি আনন্দের ভাইরাল স্ক্রিনশটটি ভুয়ো বা সম্পাদিত হতে পারে।
এরপর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা এবিপি আনন্দ ডিজিটাল বিভাগের প্রধান বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনিও আমাদের জানান, “ভাইরাল স্ক্রিনশটটি ভুয়ো। এবিপি আনন্দের ফেসবুক পেজ থেকে এমন কোনও পোস্ট করা হয়নি। বরং এবিপি আনন্দের ফেসবুক পোস্ট বিকৃত করে স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।”
পাশাপাশি এবিপি আনন্দের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভাইরাল ফেসবুক পোস্টটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায় যা আজ, ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ভাইরাল স্ক্রিনশটটিকে ভুয়ো হিসাবে উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, এবিপি আনন্দের ফেসবুক পেজের ছবি বিকৃত করে পোস্টটি করা হয়েছে, যার কোনও সত্যতা নেই।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবিপি আনন্দের একটি ভুয়ো ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে বাংলাদেশের হিন্দু মহিলাদের সঙ্গে হওয়া অত্যাচার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
এবিপি আনন্দের ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে একদিনে ৪০ হাজার হিন্দুকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশটটি ভুয়ো ও সম্পাদিত। এবিপি আনন্দের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে যে এমন কোনও পোস্ট বা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।