আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বহু প্রতীক্ষিত উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন শুরু হতে চলেছে। আর সেই আবহেই এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, গত শনিবার অর্থাৎ ২২ জানুয়ারি উত্তর প্রদেশে নাকি বিজেপি নেতাদের বেদম প্রহার করা হয়েছে।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি পোস্ট করে লিখেছেন, "পাবলিকের মার কেওড়াতলা পার"। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, উত্তর প্রদেশের ১৭ জন বিজেপি বিধায়ককে জনগণ মারধর করেছে। ভিডিওটির উপরে বাঁ-দিকে ২২.০১.২০২১ লেখা দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে ডান দিকে "Independent" নামক একটি চ্যানেলের লোগো দেখা গিয়েছে।
সেই সূত্র ধরে আমরা দেখতে পাই, শনিবার ওই একই ভিডিওটি "Independent" নামক ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওটির সঙ্গে লেখা হয়েছে, "BJP যে বিপুল ভোটে জয়ী হবে উত্তরপ্রদেশে সেটা শনিবার স্পষ্ট হল সেখানে ! মঞ্চে উঠে BJP নেতাদের উত্তম মধ্যম দিচ্ছে মানুষ!" যদিও উত্তর প্রদেশের কখন এবং কোথায় এই ঘটনা ঘটেছে তার কোনও উল্লেখ ছিল না।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর আর্কাইভ এখানে ও এখানে দেখতে পাবেন।
ইন্ডিয়া টুডে-র অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম অনুসন্ধান করে দেখেছে, ভিডিওটির সঙ্গে যে দাবি করা হয়েছে তা সত্যি নয়। প্রথমত, ভিডিওটি উত্তর প্রদেশের নয়। দ্বিতীয়ত, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়েরও নয়। ভিডিওটি বছরখানেক আগের।
আফয়া তদন্ত
গত শনিবার উত্তর প্রদেশে সত্যিই কোনও ঘটনা ঘটেছে কিনা তা জানতে সবার প্রথম আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করি। কিন্তু এমন কোনও ঘটনার প্রতিবেদন আমাদের নজরে আসেনি। যদি সত্যিই এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকত, তবে তা নিয়ে কোথাও না কোথাও খবর অবশ্যই প্রকাশিত হত।
সংশয় গভীর হওয়ায় এরপর আমরা ইনভিড টুলের সাহায্যে ভিডিওটিকে কি-ফ্রেমে ভাগ করে তার রিভার্স সার্চ করে দেখি। তখন ১০ জানুয়ারি ২০২১-এ প্রকাশিত 'হরিভূমি' নামক একটি পোর্টালে ভাইরাল ভিডিও-সহ একটি প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাই। সেই সময় গোটা দেশজুড়ে কৃষক আন্দোলন নিজের চরম পর্যায়ে ছিল। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, হরিয়ানার করনাল জেলার কেমলা গ্রামে বিজেপির পক্ষ থেকে কিষাণ মহাপঞ্চায়েত সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের ওই সভায় ভাষণও দেওয়ার কথা ছিল ও নতুন কৃষক আইনের ইতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করার কথা ছিল।
কিন্তু সেই ভাষণ শুরু হওয়ার আগেই আন্দোলনকারী কৃষকেরা সেখানে পৌঁছে মঞ্চে ভাঙচুর শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে হয়। এই ঘটনাক্রমের পর মুখ্যমন্ত্রীর সভা বাতিল করে দিতে হয়। এই ঘটনাটি নিয়ে 'টিভি৯ ভারতবর্ষের' ইউটিউব চ্যানেলেও একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, ভিডিওটি শেয়ার করে যে ধরনের দাবি করা হচ্ছে বাস্তবের সঙ্গে তার কোনও মিল নেই। ভিডিওটি হরিয়ানার এবং ঘটনাটিও প্রায় এক বছর পুরনো। এর আগেও ভুয়ো দাবি-সহ এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছিল যা আজতক-এর পক্ষ থেকে ফ্যাক্ট চেক করা হয়েছে।
শনিবার উত্তর প্রদেশে ১৭ জন বিজেপি বিধায়কে বেধড়ক মারধর করেছে জনতা।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি উত্তর প্রদেশের নয়। বছর খানেক আগে কৃষক আন্দোলনের সময় হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের সভাস্থলে এসে মঞ্চ ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। এটি তখনকার ভিডিও।