scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: বাহরাইচে হিন্দু যুবকের মৃত্যুতে উস্কানি দেওয়ায় মুসলিম বিধায়কের বাড়িতে যোগীর বুলডোজার?

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাহরাইচে হিন্দু যুবকের মৃত্যুতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উত্তরপ্রদেশের মুসলিম বিধায়ক মহম্মদ উসমানের বিলাসবহুল আবাসন জেসিবি দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার।

Advertisement

সম্প্রতি দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ। দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের সময় গুলিতে রাম গোপাল মিশ্র নামক এক ২২ বছর বয়সি যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আর তার মৃত্যুর পরেই দোকানপাট, শোরুম, বাড়িঘর ও হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়। 

সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বুলডোজারের বাড়ি ভাঙার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাহরাইচের ঘটনায় রাম গোপাল মিশ্রের মৃত্যুতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ মুসলিম বিধায়ক মহম্মদ উসমানের বিলাসবহুল আবাসন জেসিবি দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বেশি কিছুনা 🙂 উত্তর প্রদেশে বিসর্জনের সময় রাম গোপাল নামে এক ভাইকে হত্যার উস্কানির দায়ে MLA মোহাম্মদ উসমানের বিলাশবহুল ঘর ভাংগা হচ্ছে!❤️🙂 উত্তর প্রদেশ জুড়ে দাংগাকারীদের ঘর-বাড়ি,ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাংগতে মুসলিম প্রধান মুজাফফরবাদে ব্যাপক বুলডোজার একশন শুরু হয়েছে!🙂 মহারাজ যোগী আদিত্যেনাথ বলেছে জ্যান্ত অথবা মৃত্য দাংগাকারী কাউকেই ছাড়া হবে না! 🕉️” (সব বানান অপরিবর্তিত।) 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ছবিতে উত্তর প্রদেশের নয় বরং ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে হরিয়ানার নূহ জেলার সাহারা ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট ভাঙার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। উক্ত নামে বর্তমানে উত্তর প্রদেশে আদৌ কোনও বিধায়কই নেই। 

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরলা পোস্টে দাবি করা হচ্ছে উত্তর প্রদেশ সরকার বাহরাইচের ঘটনায় রাম গোপাল মিশ্রের মৃত্যুতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ মুসলিম বিধায়ক মহম্মদ উসমানের বাড়ি জেসিবি দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এই দাবি যদি সত্যি হয়ে থাকে, অর্থাৎ বাহরাইচের ঘটনার পর যোগী সরকার যদি রাজ্যের কোনও মুসলিম বিধায়কের বাড়ি জেসিবি দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে থাকে, তাহলে সেই খবর অবশ্যই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবে। 

Advertisement

তাই সবার প্রথমে ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে আমরা এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। কিন্তু সেই সার্চে আমরা এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে এই দাবির সত্যতা প্রমাণ হয়। এমনকি বাহরাইচের ঘটনার জেরে আজ পর্যন্ত উত্তর প্রদেশে  কারোর বাড়ি বা সম্পত্তি জেসিবি দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, উত্তর প্রদেশ বিধানসভার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে মহম্মদ উসমান নামক কোনও বিধায়কের নামও নেই। এর থেকে সন্দেহ হয় যে ভাইরাল ছবিটি অন্য কোনও স্থান বা ঘটনার হলেও হতে পারে।

তাই এরপর ছবিটির আসল উৎস খুঁজে পেতে আমরা তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট আল জাজিরাতে এই একই ছবি-সহ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, হরিয়ানার নূহ জেলায় এক মুসলিম ব্যক্তির সম্পত্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জেরে ভারতের বিজেপি-শাসিত রাজ্য হরিয়ানার নূহ জেলায় বিগত ৪ দিনে মুসলিমদের ৩০০টিরও বেশি বাড়িঘর ও দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ১৫০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী সার্চ করলে ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট দ্য ইকোনমিক টাইমস-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভাইরাল বিল্ডিংয়ের ছবি-সহ একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে ৬ আগস্ট হরিয়ানার নূহ জেলা প্রশাসন নূহের সাহারা ফ্যামিলি রেস্টুরেন্টটি গুঁড়িয়ে দেয়। অভিযোগ গত ৩১ জুলাই ওই রেস্টুরেন্টের ছাদ থেকে একটি শোভাযাত্রা লক্ষ্য করে পাথার ছোড়া হয়। এরপর সেটিকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে বাহরাইচের ঘটনার জেরে উত্তর প্রদেশে মুসলিম বিধায়ক মহম্মদ উসমানের বাড়ি জেসিবি দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দাবি করে হরিয়ানার নূহের সাহারা ফ্যামিলি রেস্টুরেন্টের ছবি শেয়ার করা হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

উত্তর প্রদেশের বাহরাইচে হিন্দু যুবকের মৃত্যুতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ মুসলিম বিধায়ক মহম্মদ উসমানের বাড়ি জেসিবি দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে যোগী সরকার।

ফলাফল

ভাইরাল ছবিটি উত্তর প্রদেশের নয়, বরং এটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে তোলা এবং হরিয়ানার নূহ জেলার। বর্তমানে উত্তর প্রদেশে মহম্মদ উসমান নামের কোনও বিধায়কই নেই।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement