দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পরে রাজ্যে হালকা শীত পড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসবের দ্বিতীয় মরসুম। চলতি ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাস জুড়ে সপ্তাহের শেষে শনি-রবিবার দুপুরে কিংবা বড়দিনের ছুটিতে শীতের মিঠে রোদ মেখে অনেকেরই সপরিবারে গন্তব্য হবে চিড়িয়াখানা।
শীতকাল মানেই শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের আবশ্যিক গন্তব্য আলিপুর চিড়িয়াখানা। বড়দিনে বা নববর্ষের দিন সেখানে তিলধারণের জায়গা থাকে না।
কিন্তু এ বার উৎসবের দ্বিতীয় স্পেলে কোভিডের ছক্কা হাকানোর আশঙ্কাও রয়েছে। ভিড় থেকে সংক্রমণ এড়াতে তাই আগে থেকেই সতর্ক চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
আনলক পর্বে পশ্চিমবঙ্গের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জাতীয় উদ্যানগুলি পর্যটকদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে। এর পাশাাশি মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবসের দিন থেকেই আলিপুর চিড়িয়াখানা–সহ রাজ্যের সমস্ত চিড়িয়াখানাও খুলে দেওয়া হয়েছে। মহামারির জেরে ১৭ মার্চ থেকে এগুলি বন্ধ রাখা হয়েছিল।
রাজ্যে মোট ১২টি চিড়িয়াখানা রয়েছে। প্রত্যেক বছর এই সব চিড়িয়াখানায় ৫০ লক্ষেরও বেশি দর্শক ভিড় করেন।
তবে সবকটি চিড়িয়াখানার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আলিপুর চিড়িয়াখানা ও দার্জিলিং চিড়িয়াখানা। এই দুটিতেই ৪০ লক্ষের বেশি মানুষ প্রত্যেক বছর যান।
দেশের সব থেকে পুরনো আলিপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ, হাতি, সিংহ, ক্যাঙ্গারু, জিরাফ, অ্যানাকোন্ডা এবং শিম্পাঞ্জির মতো অনেক বিপন্ন প্রজাতির জীবজন্তু রয়েছে।
এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শীত শুরুর আগে থেকেই বেশ ভালোই দর্শকের ভিড় জমেছে আলিপুর চিড়িয়াখানায়।
চিড়িয়াখানা খোলার প্রথম দিন থেকেই বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। তবে যত দিন যাচ্ছে দর্শকের সংখ্যা-সহ ভিড় ততই বাড়ছে আলিপুর চিড়িয়াখানায়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৬০০ করে দর্শকের আগমন ঘটছে চিড়িয়াখানায়।
আলিপুর চিড়িয়াখানায় প্রবেশের পর টিকিট কাউন্টারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে টিকিট কাটতে হচ্ছে সবাইকে এবং ভেতরে প্রবেশের সময় সবাইকে স্যানিটাইজার টানেলের এর মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করার পর সকলের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। যারা মাস্ক পড়ে আসবেন না তাদের চিড়িয়াখানার মধ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা।
চিড়িয়াখানার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। তার জন্য নির্দিষ্ট করে মাটিতে চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে এবং চিড়িয়াখানার মধ্যে মানুষ যাতে কোনরকম ভিড় না করে সেদিকটি আলিপুর চিড়িয়াখানার পক্ষ থেকে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
পশুপাখিদের খাঁচা থেকে শুরু করে দর্শকদের বসার জায়গা, সব কিছুই বিশেষ ভাবে স্যানিটাইজ় করার কাজ চলছে।
অন্যান্য বছর এই সময় থেকেই দৈনিক আট থেকে দশ হাজার মানুষ আসতে শুরু করেন। এ বার এখনও সেই ভিড়টা নেই। তবে শীত বাড়লে, বড়দিন কিংবা বর্ষবরণের সময়ে প্রতিদিন ১৫ হাজারের মতো লোক হওয়ার কথা মাথায় রেখে রক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
এদিকে করোনা কালে অনলাইনে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল আলিপুর চিড়িয়াখানা। ব্যাপক সারা ফেলেছিল চিড়িয়াখানার ফেসবুক লাইভ। তাই মহামারির আবহে সশরীরে হাজির না হয়েও আলিপুর চিড়িয়াখানার সমস্ত রকম পশু, পাখি সহ অন্যান্য সদস্যদের সম্পর্কে খোঁজ রাখতে 'ই জু কলকাতা' নামে একটি মোবাইল অ্যাপ আনা হয়েছে। গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপ ডাউনলোড করে ঘরে বসেই দেখা যাচ্ছে চিড়িয়াখানার বাসিন্দাদের কীর্তিকলাপ ।