শনিবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে মাটির দেওয়াল ভেঙে ৩ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তুললেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিযাত্রার আগে রবিবার সন্তানহারা তিন বাবাকে পাশে নিয়ে অভিষেক বলেন,'বিষ্ণুপুরের ঘোড়ামারায় পরিবারের ৩টে শিশু ৫, ৪ ও ৩ বছর বয়স, ফুলের মতো শিশু খেলতে গিয়ে নিম্নচাপের কারণে হুড়মুড় করে মাটির কাঁচা দেওয়াল ভেঙে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এর দায়িত্ব কার?'
কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,'গিরিরাজ সিং দিল্লিতে থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা না করে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। বাংলার প্রতি বৈমাতৃসুলভ আচরণ আবারও প্রতিষ্ঠিত হল। বিজেপি গায়ের জোরে বাংলার মানুষের টাকা আটকে রেখেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দু'দিন আগে বলেছেন, এসব আন্দোলন করে কিছু হবে না। আমরা ফোন করব, দু'দিনে টাকা চলে আসবে। গিরিরাজ সিং বলেছেন, অভিযোগ এসেছে বলে টাকা আটকে রেখেছি। গিরিরাজ সিং কার কথায় পরিচালিত হচ্ছেন, তা কাজের মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলার মানুষের সঙ্গে বঞ্চনা করেছে। বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চাইছে। আমাদের প্রতিবাদ করার অধিকারটুকু কেড়ে নিতে চেয়েছে। দিল্লির ট্রেন, বিমান বাতিল থেকে কর্মসূচির অনুমতি না দেওয়া, মন্ত্রী দিল্লি থাকা সত্ত্বেও দেখা না করেন না।'
অভিষেক আরও বলেন,'বিষ্ণুপুরের বোড়ামারায় ৩টি শিশু ৫, ৪ ও ৩ বছর- ফুলের মতো শিশু খেলতে গিয়ে নিম্নচাপের কারণে হুড়মুড় করে মাটির কাঁচা দেওয়াল ভেঙে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এর দায়িত্ব কার? ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা বিচারব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করছি, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করুন। একশো দিনের টাকা, আবাস যোজনার টাকা আটকে রয়েছে, কেন জনস্বার্থ হয়নি! জোর করে টাকা আটকে রাখা হয়েছে। চারজনের বাড়ি বিষ্ণুপুরে। আপনারা জিজ্ঞেস করুন তো, পরিবারের লোকেরা কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছেন কিনা! রাজনৈতিকভাবে লড়াই করব নির্বাচনের সময়। বিজেপি বাংলায় হেরে গিয়েছে বলে এখানকার মানুষের টাকা জোর করে আটকে রেখেছে। ছাতরায় ৬৮ বছরের বৃদ্ধা গোয়ালঘরের মাটির দেওয়াল ভেঙে প্রাণ হারিয়েছেন। একই ঘটনা বীরভূমের লাভপুরেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
তিন শিশুমৃত্যুর ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী বলে মনে করেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়,'এই নিষ্পাপ, ফুটফুটে শিশু যাঁদের জীবন শুরুই হল, ৩-৪ বছর বয়সে তাঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী নরেন্দ্র মোদী, গিরিরাজ সিং এবং এখানকার বিজেপি নেতারা। ওরা চিঠি লিখে বলেছে, বাংলার মানুষের টাকা আটকে দাও। আজকে তাঁদের হাতে বাংলার মানুষের রক্ত লেগে আছে। আমি মনে করি, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। সব কটাকে গ্রেফতার করা উচিত, এমনকি গিরিরাজ সিংকেও। কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে না? রাজ্য সরকার তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছিল।'
মৃত পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দমদম বিমানবন্দর চত্বরে অভিষেক বলেন,
'পরিবারে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও আমার সঙ্গে দেখা করতে চলে এসেছেন। এক কাপড়ে বাঁকুড়া থেকে কলকাতায় এসে দিল্লি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। কেন এই বঞ্চনা, কেন এই লাঞ্ছনা? এত ভয় কীসের! সারা দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করে দিয়েছে যাতে তৃণমূল আন্দোলন করতে না পারে। এটা মানুষের আন্দোলন। মানুষ এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।'