রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যে সম্পর্ক ভাল নয় তা কারও অজানা নয়। তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী এর আগে ধনখড়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সেই দলে ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এবার রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত নতুন মোড় নিল। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সোজা লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে নালিশ ঠুকলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিমানবাবুর অভিযোগ, বিধানসভার প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
লোকসসভার স্পিকার ওম বিড়লা বিভিন্ন রাজ্যের স্পিকারদের নিয়ে ভারচুয়াল বৈঠক করেছিলেন। সেখানেই অভিযোগ দায়ের করলেন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার অধ্যক্ষ। বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বিধানসভার কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। বিধানসভা থেকে কোনও বিল পাঠানো হলে সেটা সাক্ষর করছেন না।
West Bengal Speaker Biman Banerjee (in file photo) while participating in a virtual meeting with other Speakers including Lok Sabha Speaker Om Birla, Banerjee stated, "Governor Jagdeep Dhankhar is trying to interfere in the administration of the West Bengal Legislative Assembly". pic.twitter.com/FP4npwBJ6T
— ANI (@ANI) June 23, 2021
পশ্চিমবঙ্গের স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিধানসভার কাজে হস্তক্ষেপ করা রাজ্যপালের এক্তিয়ারে পড়ে না। তিনি সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছেন। তাঁর কথায়, “বিধানসভার ইতিহাসে কখনও কোনও রাজ্যপাল এমন এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে পরিষদীয় কাজকর্মে ও গরিব মানুষের স্বার্থে পাশ হওয়া বিল রুখতে কখনও হস্তক্ষেপ করেননি। উলটে কেন্দ্রের প্রতিনিধি হয়ে অনেকেই রাজ্য সরকার ও বিধানসভাকে সাহায্য করেছেন।” এর আগে রাজ্যপাল বদল নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সাংসদরাও একই দাবি তুলেছেন। এবার বিধানসভার স্পিকারও সেই পথে হাঁটলেন। এতে রাজভবনের চাপ আরও বাড়লো তা বলাই বাহুল্য।
এদিকে জগদীপ ধনখড়কে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন লোকসভার সংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রাজ্যপালের পদটি বাতিল করা হোক, এমন মন্তব্য করেছেন প্রসূন। তাঁর কথায়, "জগদীপ ধনখড়ের সাম্প্রতিক ক্রিয়াকলাপ দেখার পরে মনে হচ্ছে রাজ্যপাল পদটি বাতিল করা উচিত।" বিষয়টি সাংসদ হিসাবে তিনি সংসদে তুলবেন সেকথাও জানিয়েছেন প্রসূন।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে বাংলায় নিযুক্তির পর থেকেই রাজ্যের সঙ্গে বার বার সঙ্ঘাত জড়াতে দেখা গেছে ধনখড়কে। তাঁকে এমনকি ‘বিজেপি-র এজেন্ট’ বলেও প্রকাশ্যে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এর পর সময় যত এগিয়েছে, ক্রমশই দু’পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা আরও বেড়েছে। বার বার ট্যুইটারকে রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে ব্যবহার করেছেন রাজ্যপাল। ভোটের আগে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেও দেখা যায় তাঁকে। এমনকি সে নিয়ে দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে দেখাও করতে যান তিনি। এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যপাল। এই নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কাছে দরবারও করতে দেখা গেছে রাজ্যপাল ধনখড়কে।