অশান্ত উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্য মণিপুর। তফসিলি জাতির মর্যাদা পেতে চেয়ে মেটেই জনজাতির বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সেখানে। রাস্তা শুনশান, অশান্তি এড়াতে পথে চলছে সেনাবাহিনীর টহল। দেখামাত্র গুলির নির্দেশ জারি হয়েছে। বন্ধ ট্রেন চলাচল। সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ৫০ বেশি জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গিয়েছে। প্রাণহানির আশঙ্কায় মানুষজন রাজ্য ছেড়ে পালাচ্ছেন অসম ও অন্যান্য প্রতিবেশী রাজ্যে। মণিপুরের এই পরিস্থিতিতে আগেই উদ্বেগপ্রকাশ করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মণিপুরের হিংসাকে ম্যান মেড বললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে মণিপুরে না গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাংলা সফর নিয়েও কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মণিপুর নিয়ে উদ্বিগ্ন মমতা
আজ রাতে কলকাতায় আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার যাবেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। মণিপুরের পরিস্থিতি তুলে এই নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে নিশানা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলায় আসছেন ভাল কথা, কিন্তু মণিপুরে যাচ্ছেন না কেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলায় না এসে মণিপুরে যাওয়া উচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, উত্তর-পূর্বের রাজ্য জ্বলছে, আমরা উদ্বিগ্ন। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চলছে। মণিপুরের ঘটনা ম্যান মেড। বাংলাতেও এভাবে সমস্যা তৈরির চেষ্টা চলছে। কাশ্মীর ফাইলস, কেরালা স্টোরি বিকৃত তথ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে, একটি সাম্প্রদাকে নিশানা করা হচ্ছে। বিরোধীদের বুলডোজ করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি মণিপুরে হিংসার জন্য সেখানকার রাজ্য সরকারকেই দায়ি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নাগরিকদের উদ্ধারে হেল্পলাইন
মণিপুরে আটকে পড়া নাগরিকদের উদ্ধারের জন্য এদিনও দুটি হেল্পলাইন নম্বরের ঘোষণা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দুটি ‘হেল্পলাইন নম্বর’ হচ্ছে- ০৩৩-২২১৪৩৫২৬ এবং ০৩৩-২২৫৩৫১৮৫। এরআগে ট্যুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘‘আমরা মণিপুর থেকে যে ধরনের খবর এবং এসওএস বার্তা পাচ্ছি তাতে গভীর ভাবে ব্যথিত। আমি মণিপুরের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নাগরিকেরাও এখন সেখানে আটকে পড়েছেন।’’ এখনও পর্যন্ত ১৮৫ জন নবান্নের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন মমতা। বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি বলেছেন, “মণিপুর সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যারা বিমানবন্দরে আসতে পারছেন না, উপদ্রুত এলাকায় আটকে আছেন, তাদের সহায়তার জন্য আমরা মণিপুর সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”
Relieved to inform that, after receiving distress calls at the Nabanna Control Room, 18 Students of West Bengal studying at College of Agriculture, Central Agricultural University, Imphal have been specially evacuated by us at GOWB cost. They have been flown in to Kolkata by… pic.twitter.com/51UMy0402Q
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) May 8, 2023
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার জনগণের পাশে দাঁড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং মণিপুর সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেখানে আটকে পড়া লোকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রসঙ্গত, মণিপুরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বেশ কয়েকজন পড়ুয়া নবান্নের কন্ট্রোল রুমে সাহায্য চেয়ে ফোন করেছিলেন। সেইসব পড়ুয়াদের রাজ্য সরকার নিজেদের খরচা য়ইম্ফল থেকে ফিরিয়ে এনেছে। সোমবার সকাল ১০টা ১৫ নাগাদ ইম্ফল থেকে বিশেষ বিমানে দমদম বন্দরে নামেন মণিপুরে পড়াশোনা করতে যাওয়া বাংলার ১৮ জন পড়ুয়া। পড়ুয়াদের ছবি পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ইম্ফেলর কৃষি কলেজে, সেন্ট্রাল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি, এমএসসি, পিইডি পড়তে যাওয়া ১৮ জন পড়ুয়াদের বিশেষ বিমানে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেখানে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরা নবান্নের কন্ট্রোল রুমে সাহায্য চেয়ে ফোন করেছিলেন। মণিপুরে আটকে থাকা বাকিদের নিরাপদে ফেরত আনার জন্যও সব রকম চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।