জগদীপ ধনখড় এরাজ্যের রাজ্যপালী থাকাকালীন বারবার তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তাঁকে রাজ্যপালের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদনও জানান হয়েছিল। ধনখড়ের জয়গায় সি ভি আনন্দ বোস রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মমতা সরকরের সঙ্গে তাঁর সৌহার্দ্যের সম্পর্ক সকলেরই নজর কেড়েছিল। আপাতত সেইসব অতীত। বরং এবার প্রাক্তন রাজ্যপালের সঙ্গে তুলনা টেনে সি ভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন ধনখড় স্তুতিও শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়।
ভোটের আগে জেলায় জেলায় অশান্তিতে উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল খুলেছিলেন পিস রুম, আর এবার সেই ধাঁচেই রাজভবনে খুলেছেন অ্যান্টি করাপশন সেল। সাধারণ মানুষ এই কন্টোল রুমে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। দুর্নীতির নালিশ শুনতে তিনটি আলাদা সেল খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজ্যপালের বক্তব্য কণ্ঠহীনদের কণ্ঠ দেওয়ার চেষ্টা করছে রাজভবন। হিংসায় নজর রাখতে রাত জাগার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজভবন, যাতে গরিব মানুষ শান্তিতে ঘুমোতে পারেন।
রাজ্যপালের এই অতিসক্রিয়তা মোটেই ভালভাবে দেখছে না শাসক শিবির। রাজ্যপাল সমান্তরাল প্রশান চালাতে চাইছেন বলে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে তৃণমূল। বুধবার বিকেলে নবান্নে এই ‘অ্যান্টি কোরাপশন সেল’ নিয়ে মন্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্যপাল নাকি স্পেশ্যাল সেল করেছেন! এটা রাজ্যপালের কাজ নয়। রাজ্যপলকে আমরা শ্রদ্ধা করি। উনি রাজ্য সরকারের যেটা অধিকার সেখানে আননেশেসারি ইন্টারফেয়ার করছেন। এক্সপার্ট কমিটি তৈরি করার কাজটা তো সরকারের। উনি শুনছি কেরল থেকে কাউকে ডেকে নিয়ে এসে ভিসি করে দিচ্ছেন। তার একাডেমিক কি যোগ্যতা আছে?”
এরপরেই প্রাক্তন রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে বর্তমান রাজ্যপাল বোসের তুলনা টেনে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “ধনখড় যখন ছিলেন তখনও অনেক বিষয়ে আমরা একমত হতাম না। ঝগড়া হয়েছে। উনি কিন্তু কোনওদিন এটা করেননি। এখন দেখছি মুখোশের আড়ালে যা বিজেপি বলছে তাই করে দিচ্ছেন। রাজ্যপালকে দোষ দিই না। কেন্দ্রের ইশারায় এটা করছেন।”
প্রসঙ্গত দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাজ্যের সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়াতে দেখা গিয়েছিল প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। তবে রাজ্যপাল বোসের ক্ষেত্রে শুরুর দিকে নবান্ন-রাজভবনের সম্পর্ক ভালই ছিল। রাজ্যপালের ‘হাতেখড়ি’ অনুষ্ঠানে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যায় রাজভবনে। রাজ্য-রাজ্যপাল ‘সুসময়’ কাটলেও সময় যত এগিয়েছে ততই যেন ফিরেছে পুরনো ছবি। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে উপচার্য নিয়োগ, দুর্নীতি ইস্যু, একাধিক প্রসঙ্গে বারবারই সামনে এসেছে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের খবর।