রাজ্য বিজেপির প্রতিবাদ মঞ্চে এসে তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের উদ্দেশে সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছেন অমিত শাহ। শাহ যখন কলকাতায় সভায় ব্যস্ত ঠিত তখনি তাঁকে চিঠি পাঠালেন এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে আগামী শীতকালীন অধিবেশনে প্রস্তাবিত ফৌজদারি এবং দেওয়ানি বিলগুলির সংশোধনি নিয়ে তাড়াহুড়ো না করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷
ব্রিট্রিশ আমল থেকে চলে আসা ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশোধন করতে সংসদে তিনটি বিল পেশ করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই বিলগুলি হল, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম। এই তিন বিল নিয়ে রাজ্যগুলির মতামতও চাওয়া হয়েছিল। সেই বিষয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা জানিয়েছেন, তাঁর মতে এই তিন বিল নিয়ে তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। লোকসভা ভোটের আর বেশি দিন বাকি নেই। ভাল হবে যদি ভোটের পর নতুন লোকসভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এই ধরনের একটি অত্যন্ত স্পর্ষকাতর বিষয় নিয়ে ধীরেসুস্থে এগোনোর পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে বিলটি পাশ করানোর আগে আরও গভীর ভাবে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা উচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, আইনজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী, সাধারণ মানুষ সবার এ ব্যাপারে মত নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তিনটি বিলের ধারা নিয়েই রাজ্য সরকারের কিছু সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্যসভার সচিবালয়ের নবান্নের জবাব পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই তিন বিল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেও তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক অতীতে, এক্স হ্যান্ডেলে ট্যুইট করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি দণ্ডবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন সংশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তৈরি খসড়াগুলো পড়েছি। আমি অবাক হয়েছে দেখেছি যে, চুপিসাড়ে অত্যন্ত কড়া এবং কঠোর জনবিরোধী বিধি চালুর চেষ্টা হচ্ছে।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ছিল। তা প্রত্যাহারের নামে কেন্দ্রের সরকার প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় আরও কঠোর এবং স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছে, যা মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে নাগরিকদের”।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সংসদের স্থায়ী কমিটিতে তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে এবং অন্যান্য ভারতীয় দলগুলির সঙ্গে প্রস্তাবিত আইনগুলির তীব্র বিরোধিতা করছে। বাদল অধিবেশনের একেবারে শেষ দিনে আচমকাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ফৌজদারি দণ্ডবিধির বদলে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং সাক্ষ্য আইনের বদলে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম চালু করার জন্য তিনটি বিল পেশ করেন। বিলগুলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয়। বিজেপি শিবির চাইছে, মাত্র তিন মাসের মধ্যে তিনটি বিল নিয়ে স্থায়ী কমিটি রিপোর্ট পেশ করুক। যাতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই তিনটি বিল পাশ করিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু বিরোধীরা মনে করছে এত দ্রুত এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়। এতে দেশবাসীর উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।