আজ ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির পাশাপাশি সারা রাজ্যই আজ মেতেছে রবি বন্দনায়। গীতাঞ্জলী কাব্যের জন্য ১৯১৩ সালে বাঙালির প্রথম নোবেল জয় এসেছিল বিশ্বকবির হাত ধরে। বাঙালির সেই গর্বের নোবেল খোয়া গিয়েছে। এখনও তার হদিশ মেলেনি। কবির ১৬১তম জন্মবার্ষিকীতেও তাঁকে স্মরণের মাঝেই বঙ্গ রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠল কবির সেই হারিয়ে যাওয়া নোবেল নিয়েই।
১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।, নন-ইউরোপিয়ান কোনও ব্যক্তির সেই প্রথম ছিল নোবেল পুরস্কার লাভ! পদকটি রাখা হয়েছিল কবির নিজের হাতে গড়া শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী জাদুঘরে। কিন্তু নিরাপত্তার ঢিলেমির সুযোগে বাঙালি হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রথম স্বীকৃতির এই সোপান চিহ্ন নোবেল পদকটি খোয়া যায়।
২৫ মার্চ ২০০৪, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিট। আর দশটা দিনের মতো কর্মচাঞ্চল্যে মেতে উঠেছে শান্তিনিকেতন। যথারীতি ক্লাস করেছে বিশ্বভারতীর ছাত্ররা। হঠাৎ বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো খবরটা ছড়িয়ে পড়ল নোবেল চুরি হয়েছে। সবাই ছুটল রবীন্দ্রনাথের বাড়ি উত্তরায়নের দিকে। শুধু নোবেল কেন আরও অনেক রবীন্দ্র স্মৃতি থেকে শুরু করে কবিগুরুর অনেক ব্যবহার্য জিনিসপত্র। এ উত্তরায়নই আজ রবীন্দ্র সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালার কর্মচারীরা যখন ভবনের দ্বার খুলে দেন তখনই সবার চোখে পড়ে ব্যাপারটা। শুরু হয় হৈচৈ। গোটা রবীন্দ্র ভবন ঘিরে ফেলে পুলিশ। ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। সেখান থেকে চুরি হয়ে গেছে রৌপ্যপদক, ওঁ লেখা সোনার আংটি, জামার সোনার বোতাম, কাফ লিঙ্ক, মৃণালিনী দেবীর শাড়ি, সোনা-বাঁধানো নোয়া, নোবেল পুরস্কারের পদক রুপোর রেকাবি, রুপোর কফি কাপ, সামুরাই তরবারি, কফি কাপ রাখার তেপায়া, চৈনিক চামুচ, কোবে শহর থেকে পাওয়া হাতির দাঁতের ঝাঁপিসহ আরও ৩৭টি জিনিস। সেই ঘটনার ১৮ বছর অতিক্রান্ত। তবুও অধরা গুরুদেবের নোবেল।
অবাক হলেও সত্যি, ভারত সরকারের প্রায় সব গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমে তদন্ত করলেও গত ১৮ বছরে এই চুরির কিনারা করতে পারেনি কোনো সংস্থা। সিবিআই, সিআইডি এবং রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত করেছে এই আলোচিত চুরির রহস্য সন্ধানে। আর এই নিয়েই রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দিকে আঙুল তুললো বাংলার শাসক দল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চুরি যাওয়া নোবেল পদক অবিলম্বে উদ্ধার করুক সিবিআই। তদন্তের অগ্রগতি কী, প্রকাশ্যে জানাক তারা। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে এই দাবি আরও জোরদার করছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, সিবিআই এই তদন্তে তাদের অপারগতার কথা আদালতে জানিয়ে দিলে নোবেল খোঁজার দায়িত্ব রাজ্য সরকার নিতে প্রস্তুত বলেই জানিয়েছে রাজ্যের শাসক শিবির।
বেশ কয়েকবছর আগে বিশ্বভারতীতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “নোবেল চুরির তদন্তে সিবিআই কী করল জানি না। ওরা না পারলে আমি যদি তদন্তের সুযোগ পাই, খুঁজে বার করবই।” মুখ্যমন্ত্রীর সেই মুখের কথাই এবার শোনা গেল দলের মুখে। রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি যখন ‘সিবিআই, সিবিআই’ রব তুলছে, তখন নোবেল তদন্তে সিবিআইয়ের ব্যর্থতাকে হাতিয়ার করে পালটা প্রচার তীব্রতর করতে চাইছে শাসক শিবির। এদিকে বীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার চুরি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। রবীন্দ্র জয়ন্তীতে বিজেপি নেতা বলেন, "তৃণমূলের যে প্রচার মুখপত্র তাতে বলা হয়েছে যে নোবেল পুরস্কার কোথায় গেল। কিন্তু সিবিআই যাতে নোবেল খুঁজে না পায়, তার জন্য সব অসহযোগিতা রাজ্য সরকার করেছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজ্য সরকার তদন্তে বাধা দিয়েছে। আজকে জিজ্ঞাসা করছে নোবেল কোথায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুঁজে দিন। উনি তো বলেছিলেন নোবেল কেউ খুঁজে না পেলে, তিনি খুঁজে দেবেন। বাংলার সব চুরির সঙ্গে তৃণমূল জড়িত। নোবেল চুরির সঙ্গেও তৃণমূল কংগ্রেস জড়িত’।
রাহুল সিনহা যখন তৃণমূলের দিকে নিশানা করছেন তখন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। সোমবার ভাতারে তৃণমূলের তরফে পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে মানগোবিন্দ মঞ্চে বলেন, ‘‘নোবেল দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে অপমান করা হয়েছিল। আমাদের বাংলার ছেলেরা সেই নোবেলটা চুরি করে নিয়েছে।’’ এই বক্তব্যের সূত্রেই সিবিআই তদন্তের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে বিঁধেছেন তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর কথায়, ‘‘সিবিআই-সিবিআই করে এখন বিজেপি লাফাচ্ছে। সিবিআই কিন্তু সেই চুরি যাওয়া নোবেল খুঁজে বার করতে পারেনি। আজ সেই চুরি যাওয়া নোবেল খুঁজে বার করার জন্য আবার বাংলার পুলিশকে লাগানো হচ্ছে। সিবিআইকে বলা হয়েছে, আপনারা সমস্ত তথ্য আমাদের দিন। আমরা সেটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করব। আর বাংলার বিজেপি কর্মীরা লাফাচ্ছেন সিবিআই-সিবিআই করে।’’