বাংলার ১০০ দিনের শ্রমিকদের বকেয়া সহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দরবারে হাজির হয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন এরাজ্যের একাধিক তৃণমূল সাংসদও। আর ঠিক সেই দিনেই নবান্নে হাজির হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছেন সেই সময়ই নবান্নে পা দিলেন শুভেন্দু। বিধানসভা থেকে বেরিয়ে তিনি সরাসরি নবান্নে চলে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের কয়েকজন বিধায়কও।
বুধবার সকালে প্রথমে বিধানসভায় ঢুকে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন শুভেন্দু। তার পর শঙ্কর ঘোষ, চন্দনা বাউড়ি এবং বেশ কয়েক জন বিজেপি বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে হাজির হন বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রী যখন দিল্লিতে তখন হঠাৎ কেন নবান্নে হাজির শুভেন্দু? তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়ে রাজ্যের প্রশাসনিক হেডকোয়ার্টারে। নবান্নের বাইরে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কেন্দ্রের টাকা নয়ছয় হচ্ছে এরকম অভিযোগ এদিন সকালেই করেছিলেন শুভেন্দু। কেন্দ্রের দেওয়ার টাকা বাংলায় নয়ছয় হয়েছে বলে পোস্টার হাতে নিয়েই প্রথমে মুখ্য সচিবের ঘরের বাইরে বসে থাকেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। এরপর নবান্ন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, প্রশাসনকে না জানিয়েই তিনি নবান্নে এসেছেন। রাজ্যবাসীকে রাজ্য সরকার বঞ্চিত করছে, কেন্দ্রীয় অর্থ নয়ছয় করা হচ্ছে। পাল্টা সেই তথ্য এদিন মুখ্যসচিবের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু।
জানা গিয়েছে, বেলা ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ শুভেন্দু নবান্নে পৌঁছে যান। শুভেন্দু হাতে যে পোস্টার ছিল তাতে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা থেকে শুরু করে আবাস যোজনায় কত বেশি বরাদ্দ হয়েছে মোদী জামানায়, তা লেখা ছিল। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের কথায়, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ খারিজ করতেই নবান্নে হাজির হন শুভেন্দু। বরং আগের কেন্দ্র সরকারের তুলনায় মোদী সরকার বাংলাকে বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন বলে বার্তা দেন তিনি।
নবান্নের বাইরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, বিরোধী দল করলে বাংলায় বঞ্চনা জোটে। মুখ্যসচিবকে সব জানিয়ে এসেছি। দিল্লিতে গিয়ে ড্রামা! তাই পাল্টা নবান্নে এসেছি। কীভাবে বাংলার টাকা নষ্ট হচ্ছে। কেন্দ্রের টাকা নষ্ট হচ্ছে জানিয়েছি। পাল্টা যুক্তি-তথ্য দিতে এসেছি। রাজ্যে সাধারণ মানুষকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। প্রশাসনিক সভায় বিরোধীদের ডাকা হয় না বলেও দাবি শুভেন্দু অধিকারীর। বিরোধী দলনেতার কথায়, 'আমাদের সমর্থক ভোটার হলে আবাস থেকে বঞ্চিত করা হয়। আমরা যুক্তি তথ্য দিয়ে এখানে বলে গেলাম। মুখ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমরা আগে থেকে বললে ঢুকতে দিত না। আমরা সবমিলিয়ে ৫ জন এসেছি আইন মেনে।
এখানে পঞ্চায়েত ভোট লুঠ হয়। বিরোধীদের বঞ্চনা করা হচ্ছে। লড়াই হবে। এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়ব না।'
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাতের আগেই শুভেন্দু অধিকারীর চিঠি গিয়েছিলন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ঠিক সকাল ১০টা বেজে ৩২ মিনিটে ওই চিঠি পাঠানোর খবর এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করেন শুভেন্দু। বাংলার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সেই পোস্টে লিখেছেন, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজিকে একটি চিঠি লিখে জানিয়েছি, কী ভাবে বাংলায় একের পর এক দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে হাজার হাজার টাকা হাতানো হয়েছে।’’
I have written a letter to the Hon'ble Prime Minister; Shri @narendramodi Ji, illustrating how innumerous irregularities, unabated Financial Scams & unbridled corruption in West Bengal has led to wastage and siphoning of thousands of crores of Central Govt Funds, provided to the… pic.twitter.com/WE8GiwhGm9
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) December 20, 2023
মোদীকে লেখা সেই চিঠির ছবিও এদিন সকালে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন বিরোধী দলনেতা। সেই সঙ্গে লেখেন, ‘‘দুর্নীতিতে ডুবে থাকা বাংলায় মানুষের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা মানুষের হাতেই পৌঁছয় না। দুর্নীতির জন্যই টাকা পেয়েও বঞ্চিত থাকেন তাঁরা।’’