ইলিশপ্রেমী বাঙালিদের জন্য সুখবর। গত বৃহস্পতিবারই রাজ্যে ঢুকে পড়েছে পদ্মার ইলিশ। । পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রায় ৪০ মেট্রিক টনেরও বেশি রুপোলি শস্য এসেছে বাংলায়। ইতিমধ্যে সেই ইলিশ পৌঁছে গিয়েছে হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারেও। ব্যবসায়ীরা শুক্রবার সেই ইলিশ হাতে পেয়েছেন। আর রবিবার সব বাজারে চলে এসেছে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ।
রবিবার বৃষ্টি ভেজা দিনে কলকাতা ও শহরতলির বাজারগুলিতে দেখা মিলেছে রুপোলি ইলিশ। তবে যে দামে বিক্রি হচ্ছে পদ্মার ইলিশ, তাতে মধ্যবিত্ত বাঙালির হাতে ছেঁকা লাগতে বাধ্য। কলকাতার বিভিন্ন বাজারে বাংলাদেশি ইলিশের দাম ঘোরাফেরা করছে ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত প্রতি বছরই দুর্গা পুজোর সময় বাংলাদেশের থেকে এরাজ্যে ইলিশ পাঠানো হয়। এবছরও কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রক ইলিশ রফতানি করতে সম্মত হয়েছে। এ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা প্রায় ৪০০০ মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করার অনুমতি পেয়েছেন। সেই চালানের অংশ হিসেবেই বৃহস্পতিবার মোট ৪৫ মেট্রিক টন ইলিশ বনগাঁ হয়ে এসেছে হাওড়তে। পদ্মার ইলিশ এসে গিয়েছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরের অধিকাংশ ইলিশ মাছের দোকানের সামনে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের লম্বা লাইন। এবার বাংলাদেশ থেকে যে ইলিশগুলো কলকাতায় এসেছে, তার বেশিরভাগের ওজন রয়েছে ৮০০-১৩০০ গ্রাম। এক কেজির ওজনের পদ্মার ইলিশের দাম রয়েছে প্রায় ২০০০ টাকার কাছাকাছি। পদ্মা- মেঘনার ইলিশ কিনতে প্রতি কেজিতে কমপক্ষে তাই ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ করতেই হবে আমজনতাকে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণক জানিয়েছে, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ৩৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ আসবে এ দেশে। মোট ৭৯ জন ইলিশ কারবারিকে ৫০ টন করে ইলিশ পাঠানোর ছাড়পত্র দিয়েছে ঢাকা। সাকুল্যে যে ৪০ দিনের মেয়াদে রাজ্যে পদ্মার ইলিশ ঢোকার ছাড়পত্র হাতে এসেছে, তার মধ্যেও বিস্তর ফাঁক রয়েছে। খাতায়-কলমে ইলিশ আমদানির মেয়াদ ৩০ অক্টোবর হলেও বাস্তবে সেই মেয়াদ ১১ অক্টোবরেই ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। ইলিশ আমদানিকারীরা জানতে পেরেছেন, ১২ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কাজেই এ বছর বাংলাদেশের হাসিনা সরকার প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আমদানির অনুমতি দিলেও শেষ পর্যন্ত কত ইলিশ আমদানি করা যাবে তা নিয়েই সংশয়ে রয়েছেন এদেশের মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
কলকাতার মাছ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পদ্মার ইলিশ রাজ্যে এলেও দাম কিন্তু নাগালের খুব একটা মধ্যে থাকবে না। আগামী দিনে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা দাম হতে পারে এক কিলো ওজনের ইলিশের। তবে অষ্টমী , নবমী, ভাইফোঁটাতে কলকাতার বাজারে পদ্মার ইলিশের দাম চড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ইলিশ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। নানা আলাপ আলোচনার পর ফের বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ আসতে শুরু করে ২০১৯ সাল থেকে। মূলত উৎসবকে কেন্দ্র করেই এদেশের মৎস্যবিলাসী মানুষের কথা মাথায় রেখে ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এর তরফে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবার উৎসবের মরশুমে বাংলাদেশের রুপোলি শস্য আমদানি করার ছাড়পত্র দেয় সরকার। বাংলাদেশ সরকারের সেই ছাড়পত্রে দেখা যাচ্ছে ২০১৯ সালে মাত্র ৫০০ মেট্রিক টন রূপালী শস্য আমদানির অনুমতি মিলেছিল। ২০২০ সালে সেই অনুমতির পরিমাণ আরেকটু বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৫০ মেট্রিক টন। এই দুই বছরই যা অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল সমস্ত ইলিশ আমদানি করা গিয়েছিল। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার ৪৬০০ মেট্রিক টন রুপোলি শস্য আমদানি করার অনুমতি দিলেও মাত্র ১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২ সালে অর্থাৎ গত বছর অনুমতির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৯০০ মেট্রিক টন। যদিও মাত্র ১৩০০ মেট্রিক টন আমদানি করা গিয়েছিল রুপোলি শস্য।