ভবানীপুরে হাইভোল্টেজ নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আসনে তিনি বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে যান। ফলে নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে ৬ মাসের মধ্যে অন্য একটি আসন থেকে জিতে আসতে হবে। বিধানসভা নির্বাচনে ভাবনীপুরে তৃণমূলের হয়ে জেতেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি পদত্যাগ করায় এই আসনটি বিধায়কশূন্য হয়ে পড়ে। এই আসনেই এবার লড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তাঁকে কড়া টক্কর দিতে প্রচার চালিয়েছেন বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। রাজ্য বিজেপির প্রথমসারির নেতারা তাঁর হয়ে প্রচার চালিয়েছেন। সেই সঙ্গে লড়াইয়ে রয়েছেন বামেরাও। তরুণ মুখ শ্রীজীবকে দাঁড় করিয়ে প্রচার চালিয়েছে সিপিএম। ফল ঘোষণা ৩রা অক্টোবর।
এক নজরে ভবানীপুর
সমস্ত কোভিড বিধি মেনেই চলবে ভোটগ্রহণ। সকাল ৭টা থেকে সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। মোট ২৮৭টি বুথ থাকছে ভবানীপুরে। এর মধ্যে মেন বুথ ২৬৯টি। প্রত্যেকটি বুথের বাইরে ২০০ মিটার এলাকা পর্যন্ত জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ লাখ ৬ হাজার ৪৫৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৫ হাজার ২০৯ জন। মহিলা ভোটার ৯৫ হাজার ২০৯ জন।
প্রার্থী
তৃণমূলের তরফ থেকে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। সিপিএম প্রার্থী করেছে আলিপুর আদালতের আইনজীবী শ্রীজীব বিশ্বাসকে। কংগ্রেস এই আসনে কোনও প্রার্থী দেয়নি। হিন্দুস্তানী আওয়াম মোর্চার হয়ে লড়ছেন শতদ্রু রায়। নির্দল হিসাবে লড়ছেন ৭ জন। তাঁরা শতদ্রু রায়, মলয় গুহ রায়, সাহিনা আহমেদ, আশরফ আলম, সুব্রত বসু, রুমা নন্দন, চন্দ্রচূড় গোস্বামী। এর পাশাপাশি বহুজন মহা পার্টির তরফে উপনির্বাচনে লড়ছেন মঙ্গল সরকার। ভারতীয় ন্যায় অধিকার রক্ষা পার্টির প্রার্থী হিসেবে ভবানীপুর উপনির্বাচনে লড়ছেন স্বর্ণলতা সরকার।
নিরাপত্তা
ভবানীপুরের উপনির্বাচনের দিন শহরের নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর লালবাজার। বুধবার থেকেই ভবানীপুর কেন্দ্রে পৌঁছছে অতিরিক্ত ফোর্স। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি কলকাতা পুলিশ আজ দূর্গের মতো ঘিরে রাখবে ভবানীপুর কেন্দ্রে। ভবানীপুর কেন্দ্রের প্রহরায় ৫ জন জয়েন্ট সিপি পদমর্যাদার আধিকারিক। ১৪ জন ডেপুটি কমিশনার ও ১৪ জন অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার থাকছেন। থাকবে ৯টা স্ট্রাইকিং ফোর্স, ১৩ টা কিউ আর টি ভ্যান, ৯ ফ্লাইং স্কোয়াড, প্রস্তুত থাকবে র্যাফ। র্যাফে থাকবে মহিলা অফিসারও। চলবে রিভার প্যাট্রোলিং। ৩৮ টি জায়গায় পুলিশ পিকেট করা হচ্ছে। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে মোতায়েন থাকবেন ১০০ জন ট্রাফিক সার্জেন। ভবানীপুর কেন্দ্রেই শুধু থাকবে ৭টা নাকা পয়েন্ট। যে যে রাস্তায় পুলিশের বড় গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না, সেগুলোর জন্য থাকবে বাইক পুলিশ। ভবানীপুর কেন্দ্রের ৯টা থানায় মোটর সাইকেল ইউনিট থাকবে ২টো করে। শুধু রাজ্য কিংবা কলকাতা পুলিশ নয়। ভাবনীপুরে মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। মোট ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে ভবানীপুরে
কমিশনের তৎপরতা
ভবানীপুরে হাইভোল্টেজ ভোটে প্রার্থী খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার দিনভর বৃষ্টিতে জলমগ্ন ভবানীপুরের অধিকাংশ ওয়ার্ড। এই অবস্থায় তাই সবরকম প্রস্তুতি বাড়িয়ে তুমুল তৎপর নির্বাচন কমিশন। দুর্যোগের জন্য কয়েক দফা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে। ইভিএম মেশিনকে নিরাপদ রাখার জন্য ট্রান্সপারেন্ট পলিথিন ব্যাগ দেওয়া হবে। যাতে ইভিএম মেশিন জলে ভিজে না যায়। প্রত্যেক ভোট কর্মীকে দেওয়া হচ্ছে রেনকোট। প্রত্যেকটি বুথে সেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বৃষ্টিকে মাথায় রেখে। ডিসি আরসি সেন্টার থেকে যাতে ভোট কর্মীরা নিরাপদে ভোটের যাবতীয় সামগ্রী নিয়ে যেতে পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা কমিশনের। এই প্রথম ভোট কর্মীদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে রেনকোট। যে জায়গাগুলিতে জল জমে সেই জায়গাগুলো ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যৌথ পরিদর্শনও করেছে। এই জায়গাগুলিতে সব সময় পাম্প জল বের করার জন্য ব্যবস্থা থাকবে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এবং সিভিল ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট দুটি বোটের ব্যবস্থা রাখছে, যাতে তিন ফুটের উপর জল জমলে এই বোটগুলি ব্যবহার করা যাবে।
এক নজরে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ইতিহাস
২০২১ বিধানসভা নির্বাচন
তৃণমূলের শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় পান ৭৩,৫০৫ ভোট। বিজেপির রুদ্রনীল ঘোষ পান ৪৪,৭৮৬টি ভোট। কংগ্রেসের মহঃ শাদাব খান পান ৫,২১১টি ভোট। এর পাশাপাশি একজন বিএসপি এবং ৫ জন নির্দল প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু কারোর প্রাপ্ত ভোটই হাজারের গণ্ডি পার করেনি।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচন
তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পান ৬৫,৫২০টি ভোট। ৪৭ শতাংশ ভোট পান তিনি। কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাসমুন্সী পান ৪০,২১৯টি ভোট। মোট ২৯ শতাংশ ভোট। বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র কুমার বসু পান ২৬,২৯৯টি ভোট। ১৯ শতাংশ ভোট পায় বিজেপি।
২০১১ বিধানসভা নির্বাচন
তৃণমূলের সুব্রত বক্সী পান ৮৭,৯০৩টি ভোট। মোট ৬৪ শতাংশ ভোট পান তিনি। সিপিএমের নারায়ণ প্রসাদ জৈন পান ৩৭,৯৬৭টি ভোট। মোট ২৭ শতাংশ ভোট পান তিনি। বিজেপির রামচন্দ্র জয়সওয়াল পান ৫ হাজার ভোট। মোট ৩ শতাংশ ভোট পায় বিজেপি।
২০১১ বিধানসভা উপ-নির্বাচন
ভোটে জেতার কয়েক দিনের মধ্যে পদত্যাগ করেন সুব্রত বক্সী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়েন। তিনি পান ৭৩,৬৩৫টি ভোট। সিপিএমের নন্দিনী মুখোপাধ্যায় পান ১৯ হাজার ভোট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭৭ শতাংশ ভোট নিয়ে উপ নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন। বামেদের ভোট কমে গিয়ে হয় ২০ শতাংশ।
প্রার্থীদের সম্পত্তি
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুসারে সম্পত্তির অঙ্কে সব থেকে এগিয়ে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৮২ লাখ ৩১ হাজার ২২২ টাকা। তাঁর বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৩৫ হাজারের কিছু বেশি টাকা। তাঁর মোট ৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এছাড়া একাধিক মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে প্রিয়াঙ্কার। তাঁর গয়নার দাম প্রায় ১৩ লাখ টাকা । এই প্রার্থীর ঋণ রয়েছে ৩৫ লাখ টাকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জমা দেওয়া হলফনামায় জানিয়েছেন, তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ লক্ষ ৩৮ হাজার ২৯ টাকা। ৯ গ্রাম ৭০০ মিলিগ্রাম অলঙ্কার রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭০ টাকার। চলতি অর্থবর্ষে তা বেড়েছে। এখন তাঁর সম্পত্তি ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪৫ টাকা। ভবানীপুরের বাম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাসের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৩২ লাখ ১০ হাজার ৮৪০ টাকা ৫২ পয়সা। তাঁর চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে।