আরজি কর কাণ্ডে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেছেন জহর সরকার। আরজি কর কাণ্ডে রাজ্য সরকারের ভূমিকায় তিনি বেজায় ক্ষুব্ধ। সাফ করে দিয়েছেন জহর সরকার। তারই মধ্যে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বললেন, জহর সরকারের পদত্যাগে হবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের পদত্যাগ দরকার।
দিলীপ ঘোষ বলেন, 'এটা জেনে ভালো লাগছে যে, জহর সরকার এতদিন পরে হলেও তৃণমূলের সংস্কৃতি বুঝতে পেরেছেন। তবে এই ছোটো পদত্যাগে কাজ হবে না। আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও পদত্যাগ দাবি করছি।' প্রসঙ্গত, এর আগে রাজ্য বিজেপির একাধিক মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। পোস্টার ও স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। এবার দিলীপ ঘোষের মুখেও শোনা গেল একই কথা।
আরজি কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। প্রতিদিনই জেলায় জেলায় ও শহর কলকাতায় মিছিল হচ্ছে। দোষীদের সাজার দাবিতে মিছিল করছেন আন্দোলনকারীরা। আজ সকাল থেকে মিছিল হয়েছে একাধিক জায়গায়। তবে সকালে এই আন্দোলনের মধ্যেই বিস্ফোরক ঘোষণা করেন জহর সরকার।
জহর সরকার জানান, তিনি সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করতে চান। তিনি সক্রিয় রাজনীতিতেও আর থাকতে চান না। এই মর্মে চিঠিও পাঠান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
জহর সরকার ২ পাতার একটি চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়কে। সেখানে তিনি লেখেন, 'আমি অনেক চিন্তা ভাবনার পর স্থির করেছি সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করব এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হব। আমার কখনও কোনও দলীয় পদ বা অন্য কিছুর উচ্চাশা ছিল না। আমি মোদী সরকারের স্বৈরাচারী, বিভেদমূলক, বৈষম্যমূলক ও গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপ ও নীতির স্বার্থহীন ও সুতীব্র সমালোচনা করতে পেরেছি এটাই আমার সন্তুষ্টির কারণ। কিন্তু সংসদে নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পার, যখন ২০২২ সালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর চূড়ান্ত দুর্নীতির খোলাখুলি প্রমাণ দেখে, প্রকাশ্যে মতামত দিই যে দল ও সরকারের এই ব্যাপারে অত্যন্ত সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন, তখন দলের আনক বর্ষীয়ান নেতা আমাকে হেনস্থা করেন। তখন আমি পদত্যাগ করা থেকে বিরত ছিলাম এই আশা নিয়ে যে আপনি কাট মানি ও আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক বছর আগে যে আন্দোলন আরম্ভ করছিলেন, তা চালিয়ে যাবেন।'
এরপরই জহর সরকার আরজি কর প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি লেখেন, ' গত একমাস ধৈর্য্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি আপনি কেন সেই পুরোনো মমতা ব্যানার্জির মতো ঝাঁপিয়ে পাড় সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সাঙ্গ কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে তা এক কথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই জানে রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা আনেক আগেই ফিরে আসাত পারত যদি দুর্নীতিগ্রস্ত এই ডাক্তারদের চক্র ভেঙে দেওয়ার সময়চিৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। এবং যে উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা এই নাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেওয়া হত। আমার বিশ্বাস এই আন্দোলনে পথে নামা মানুষেরা অরাজনৈতিক এবং স্বতস্ফূর্তভাবে এই প্রতিবাদ করছেন। অতএব রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা সমীচীন হবে না।'