scorecardresearch
 

একগুচ্ছ নিষ্পত্তি না হওয়া তদন্ত, তবু 'বলির পাঁঠা' CBI?

এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে কথায় কথায় আমি তো দেখছি প্রত্যেকটা জেলায় তৃণমূলের কিছু একটা হলেই সঙ্গে সঙ্গে সিবিআই তদন্ত শুরুও হয়ে যাচ্ছে।

Advertisement
ফাইল ছবি-- PTI ফাইল ছবি-- PTI

সিবিআই নিয়ে কী কাণ্ডই না চলছে! এখন কথায় কথায় সবাই সিবিআই-এর তদন্ত দাবি করে। এই তো আজ হাওড়ায় শিবপুরে আমাদের বাড়ির বাইরে তিন তিনটে গাড়ির চারটে করে টায়ার চুরি হয়ে গেছে, আর তার সঙ্গে ব্যাটারি। মধ্যরাতে কেউ করেছে। সারিবদ্ধ গাড়িগুলোর মাঝখান থেকে তিনটে গাড়িতে চুরি হয়েছে। করলো টা কে?হইচই সকাল থেকে পাড়ায়। স্থানীয় যারা বাসিন্দা তাদের দাবি অবিলম্বে সিবিআই তদন্ত করতে হবে ! কে এই চুরি করেছে! এর পেছনে একটা নিশ্চয়ই কোনও বড় ষড়যন্ত্র আছে। কী কাণ্ড! 

আমরা সেই সাংবাদিকতা যখন শুরু করেছিলাম তখন থেকেই শুনছি সিবিআইয়ের তদন্ত। কিন্তু এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে কথায় কথায় আমি তো দেখছি প্রত্যেকটা জেলায় তৃণমূলের কিছু একটা হলেই সঙ্গে সঙ্গে সিবিআই তদন্ত শুরুও হয়ে যাচ্ছে। কখনও কখনও হাইকোর্টও নির্দেশ দিচ্ছে এটা নিয়ে সিবিআই কর, ওটা নিয়ে সিবিআই কর। আবার এটাও আমি জানি যে সিবিআই-এর যে অফিসাররা যাঁরা যত জন রয়েছেন এবং সিবিআই এর যতগুলো তদন্ত এখনও পর্যন্ত চলছে অর্থাৎ যতগুলি এখনও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি অর্থাৎ concluding enquiry-এর অবস্থায় নেই তার সংখ্যা অপরিসীম। সিবিআই বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে (প্রধানমন্ত্রী হলেন সিবিআই দফতরের প্রধান) বলছেন আমাদের আরও কর্মী চাই, আমাদের আরও লজিস্টিক সাপোর্ট চাই, তা না হলে আমরা তদন্ত করে উঠতে পারছি না। 

সিবিআই এখন সব তদন্ত নিতে চাইছেও না। যোগিন্দর সিং যখন সিবিআই ছিলেন উনি তো এই ব্যাপারে বইতে সবকিছু লিখেও গেছেন যে,কিভাবে একটা গাড়ি পর্যন্ত পারমিশন করতে গেলে সেই সময় দেবেগৌড়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রীতিমতো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এর অনুমোদন দরকার হতো। যোগিন্দর সিংও কর্নাটক ক্যাডারের অফিসার ছিলেন। দেবেগৌড়াও কর্ণাটক ক্যাডারের অফিসার ছিলেন। এতদসত্ত্বেও কি কি বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন, কি কি রাজনৈতিক চাপ তার ওপরে এসেছে এই সব কথা তো তিনি লিখে দিয়ে গেছেন। সেই ট্রাডিশন কি এখনো সমানে চলেছে?

Advertisement

এখন এই এতো সিবিআই তদন্ত। প্রথম কথা হচ্ছে যে, সিবিআই তদন্তের দাবি উঠছে বারবার এটা একটা সিবিআই এর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে ভাল দিকও প্রমাণ করে। বোধ হয় তার মানে সিবিআইয়ের একটা বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। আমাদের ছোটবেলাতেও শুনতাম যে, কোন একটা খবর যদি গুজব হিসেবেও প্রচারিত হয়ে যেত তাহলে লোকে বলত যে কোথায় শুনেছেন এই খবরটা? বলতো যে বিবিসিতে।বিবিসি মানেই হল সত্যি।এই যে একটা ব্যাপার এই ব্যাপারটা তাহলে সিবিআই এর ক্ষেত্রেও আছে। সিবিআই তদন্ত মানেই তাহলে সত্য উদঘাটিত হবে।এটাতো সিবিআইয়ের একটা বিশ্বাসযোগ্যতার দিক আছে। কিন্তু আসল কথাটা হল যে ,রাজ্যের যে শাসক দল আর কেন্দ্রের যে শাসক দল তার বিরোধিতার যে রাজনীতি তার মধ্যে কিন্তু ভিকটিম হয়ে যাচ্ছে  সিবিআই নামক এই তদন্তকারী সংস্থাটা। কেননা ধারণাটা হচ্ছে যে, বিরোধীরা অর্থাৎ শাসক দল যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তখন তারা অভিযোগ করছে যে সিবিআইকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কংগ্রেস যেভাবে একসময় করেছিল। এখন বিজেপি করছে।

আবার অন্যদিকে শাসক দল বলছে যে ,শাসক দলের যে সিআইডি তার ওপর মানুষের আস্থা নেই, পুলিশের ওপরে আস্থা নেই সেই কারণেই মানুষের ক্ষোভ ফেটে পড়ছে। আর সেই কারণে সিবিআই হলে মনে হচ্ছে একটা ন্যায্য বিচার পাওয়া যাবে।আদালতও সেই কারণে অনেক তদন্ত সিবিআই এর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।সত্যি কথা বলতে, সারোদা নারোদা'রও তদন্ত আদালত থেকে শুরু হয়েছিল। মানে এটা আদালতের কংগ্রেস জমানার একটা নির্দেশ। যার ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর সেই সিবিআই তদন্তটা চালান।কিন্তু এখন যেরকম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই। আগে তো শুধু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর মত বড় নেতার বিরুদ্ধে হত। এখন তো জেলায় জেলায় খুচরো নেতাদের বিরুদ্ধেও সিবিআই হচ্ছে। তৃণমূলের সমর্থকদের ধারণা হচ্ছে যে ২০২৪এর লোকসভা ভোটের আগে সিবিআই অতি সক্রিয় হচ্ছে। তারপরে বিধানসভা নির্বাচনের আগে হয়তো আরও সক্রিয় হবে। 

সুতরাং সিবিআইকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যে হচ্ছে না এটাও কিন্তু মানুষকে বিশ্বাস করানো কঠিন।সুতরাং নিরপেক্ষভাবে একটা কথা বলা যায় যে সিবিআই এখন কেন্দ্র এবং রাজ্য এই যে রাজনীতিটা তৃণমূল-বিজেপি যে রাজনৈতিক বিরোধিতা সেই রাজনীতির মাঝখানে কিন্তু চিঁড়ে চ্যাপ্টা।সিবিআই নিজেই এখন ভিকটিম। কিন্তু সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতাকে বজায় রাখতে গেলে আমার মনে হয় রাজনীতি থেকে সিবিআইকে যে কোনো মূল্যে বের করে আনতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানটি নেহেরু তৈরি করেছিলেন,স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু তিনি মারা গিয়েছিলেন তাই সিবিআইয়ের কাজকর্ম শুরু হয়েছিল লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর আমলে। কিন্তু সেই সিবিআই নামক এরকম একটা পৃথক যে সংস্থা তৈরি হয়েছিল তার যে প্রয়োজনীয়তাটা কিন্তু ফুরোয়নি।সুতরাং তাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বটা কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রের।

Advertisement