সময়টা ২০১৫ সাল। কুমোরটুলিতে প্রতিমার কাঠামোয় তখন সবে শুরু খড়ের বাঁধন। পুজোর সেল শুরুর বহু আগেই গড়িয়াহাটের মোড় থেকে ইএম বাইপাস, টালি থেকে টালা ছেয়ে গেল 'এত বড় সত্যি'তে। পরে সামনে এল এই 'বড় সত্যি' আসলে দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর থিম (Deshapriya Park)। সেই বছর সত্যিই দেশপ্রিয় পার্কে ছিল সবচেয়ে বড় চমক। বিশ্বের সব থেকে বড় দুর্গা। ৮৮ ফিটের দুর্গা দেখতে রীতিমতো হুড়োহড়ি পড়ে গিয়েছিল। ভিড়ের চাপে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় পুজো শুরুর আগেই বেজে যায় বিদায়ের বাদ্যি। বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশপ্রিয় পার্কের পুজো। এযাবৎকালের অন্যতম বড় বিতর্কিত পুজো হয়েই শহরের ইতিহাসে রয়ে গেল। কিন্তু বিতর্ক তো শেষ, এখন তাহলে কোথায় বিশ্বের সব থেকে বড় দুর্গা?
দেশপ্রিয় পার্কের সেই বিতর্কিত দুর্গা প্রতিমা গড়েছিলেন মিন্টু পাল। bangla.aajtak.in-কে মিন্টু পাল জানান যে ওই প্রতিমা গড়তে ৬ মাস সময় লেগেছিল। ২২ জন কারিগর ও মিন্টু পাল নিজে দাঁড়িয়ে সেই মূর্তি গড়ে তুলেছিলেন। ফাইবার গ্লাসের মূর্তি ছিল। কিন্তু হঠাৎ যে এই বিতর্ক হবে তা নিজেও বুঝতে পারেননি মৃৎশিল্পী। বিশ্বের সব থেকে বড় দুর্গা দেখতে এত মানুষের ভিড় হয়েছিল যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার আগেই এই পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিন্টু পাল বলেন, সেই দুর্গা তো কেউই দেখতেই পেল না। এমনকী এই পুজো ও দুর্গা প্রতিমা নিয়ে বিতর্ক এমন হয় যে তা সংরক্ষণও করা হয়নি। খুব আক্ষেপের কন্ঠেই শিল্পী জানান যে রাজ্য সরকার প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল যে এই দীর্ঘ প্রতিমাকে ইকো পার্কে রাখবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা আজও বাস্তবিত হয়নি।
তাহলে কোথায় রয়েছে এই ৮৮ ফিটের দুর্গা প্রতিমা? মিন্টু পাল জানান এই পুজোতে যারা স্পনসর ছিল স্টার সিমেন্ট, তাদের কাছেই রয়েছে এই দুর্গা প্রতিমা। তাঁর কথায়, যদিও এটা জনসমক্ষে রাখা উচিত ছিল, মানুষের দেখার কথা ছিল এই মূর্তিটি। শিল্পী জানান, তিনি ও তাঁর কারিগরেরা এই মূর্তিটি পার্ট পার্ট করে খুলে স্টার সিমেন্টের ডানকুনির গোডাউনে রেখে আসেন। মিন্টু পাল খুবই আক্ষেপের সুরে জানান যে তাঁকে বলা হয়েছিল সংরক্ষণ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁকে জানানো হবে। কিন্তু বছরের পর বছর ঘুরে গেলেও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মৃৎশিল্পী জানান যে এভাবে বাংলার সৃষ্টিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত তিন বছর ধরে দেশপ্রিয় পার্কের প্রতিমা তৈরিও করেন না শিল্পী।
সেই বছর বড় দুর্গার এক ঝলক দর্শনের ঠেলায় দক্ষিণ কলকাতার তখন নাভিশ্বাস সঙ্গে কলকাতা পুলিশেরও। তৃতীয়া থেকে দেশপ্রিয় পার্কের দর্শনার্থীর চাপে কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে উপছে পড়া ভিড়। একসময় ভিড় সামাল দিতে মেট্রো বন্ধের মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, পুজোর মাঠে ভিড়ে চাপে পড়ে গিয়ে আহত হন ১০ জন। তিনজন গুরুতর। একের পর এক দুর্ঘটনা সব মিলিয়ে পুজোয় দর্শক ঢোকা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন নগরপাল। এরপরই বিশ্বের সব থেকে বড় দুর্গা দর্শন বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতেই পার্কের চারপাশ ঘিরে ফেলা হয় কালো কাপড়ে, মাঠে নিষিদ্ধ হয়ে যায় দর্শক প্রবেশ। ষষ্ঠীতে পাকাপাকিভাবে বড় দুর্গার দর্শন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন নগরপাল। পুজো শুরুর আগেই অন্তরালে চলে যায় 'বড় দুর্গা'। সেই ঘটনার পর আটবছর কেটে গেলেও সর্বসমক্ষে আর দেখা মেলেনি সেই বড় দুর্গার।