scorecardresearch
 

২০২০-তে জমিয়ে দুর্গাপুজো করা BJP এবার কি করবে? মুখে কুলুপ নেতৃত্বের  

সালটা ২০২০। সল্টলেকে EZCC-তে বিজেপির দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে (Durga Puja 2021) সাজো সাজো রব। পাঞ্জাবি ও ধুতি পরে সেই পুজো ভার্চুয়ালি উদ্ভোধন করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় মাসখানেক ধরে সেই দুর্গাপুজোর প্রস্তূতি তদারকি করে গেছিলেন বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা।

Advertisement
২০২০ সালে বিজেপির দুর্গাপুজো। ছবি-পিটিআই ২০২০ সালে বিজেপির দুর্গাপুজো। ছবি-পিটিআই
হাইলাইটস
  • ২০২০তে জমিয়ে দুর্গাপুজো করেছিল বিজেপি
  • এবছর এখনও কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি
  • আদৌ পুজো করবে বিজেপি, বাড়ছে জল্পনা

সালটা ২০২০। সল্টলেকে EZCC-তে বিজেপির দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে (Durga Puja 2021) সাজো সাজো রব। পাঞ্জাবি ও ধুতি পরে সেই পুজো ভার্চুয়ালি উদ্ভোধন করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় মাসখানেক ধরে সেই দুর্গাপুজোর প্রস্তূতি তদারকি করে গেছিলেন বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা। উদ্ভোধন অনুষ্ঠানও হয়েছিল জাঁকজমক ভাবে। শুরুতে নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নৃত্যানুষ্ঠান, বাবুল সুপ্রিয়র গান ইত্যাদি। কিন্তু এখন কার্যত উল্টো ছবি। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপি। আর বাকি মাত্র আড়াই সপ্তাহ। তার পরেই শুরু বাঙালির প্রাণের দুর্গাপুজো। কিন্তু এ বছর কাকতলীয় ভাবে বিজেপির তরফ থেকে দুর্গাপুজোর কোনওরকম প্রস্তূতি চোখে আসছে না।  EZCC-ও ফাঁকা অবস্থায় রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, আদৌ এ বছরে দুর্গাপুজো করবে তো বিজেপি? সেই নিয়ে বাড়ছে জল্পনা।

আরও পড়ুন, উখরার ভট্টাচার্য বাড়িতে দেবীই বলেছিলেন, 'খেপা মা রূপে পুজো করিস'

কয়েকদিন আগে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও বর্তমান সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমি গত বছর পুজোয় ছিলাম না। যাঁরা সেই সময়ে পুজো করেছিলেন, তাঁরা হয়তো অনেকেই আজকে দলে নেই। সেই জন্য আমার যতদূর জানা আছে এখনও পর্যন্ত পুজোর কোনও প্রস্তূতি শুরু হয়নি। গতবার আমাদের কালচারাল সেক্রেটারি পুজোটা করেছিলেন। জানি না এবার করছেন কিনা। আমি গতবারও বলেছিলাম দলের কাজ পুজো করা নয়। কিছু লোক গতবার করেছিল, এবার তাঁরা কী ভাবছেন, আমি জানি না।"

বিজেপির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি পদে বদল হয়। দিলীপ ঘোষকে রাজ্য সভাপতি করা হয় বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে। মাত্র কয়েকদিন আগেই তৎকালীন রাজ্য সভাপতির মুখে একথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যাচ্ছে, এবছর বিজেপির দুর্গাপুজো আয়োজন ঘিরে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, এখনও পর্যন্ত কোনও তৎপরতাই দেখা যায়নি পদ্ম শিবিরের। সদ্য বাংলার বিজেপির সভাপতি দায়িত্ব পাওয়া সুকান্ত মজুমদার এখনও এ বিষয়ে কিছু জানানি। উল্টে দিলীপ ঘোষের দাবি, যাঁরা দলে সেই সময়ে দলে ছিলেন, আজ অনেকেই নেই। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলবদলকারী মুকুল-বাবুলদেরই নিশানা করেছেন তিনি। কারণ ২০২০ দুর্গাপুজোর আয়োজনের সময়ে, তাঁদেরই দেখা গিয়েছিল।

Advertisement

কাদের কাদের ২০২০ সালে দেখা গিয়েছিল

কৈলাস বিজয়বর্গীয়- রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক ছিলেন। ২০২০ সালে EZCCতে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠানের সময়ে তিনি আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হারের পরে তাঁকে আর দেখা যায়নি। মে মাসে ভোটের ফলাফলের পরে বাংলার বিজেপির কোনও কর্মসূচিকে কৈলাসকে দেখা গিয়েছে কিনা মনে করতে পারছেন না কেউই। 

মুকুল রায়- রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতা ছিলেন। ২০১৭ সালে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে সামিল হন। ২০২০ বিজেপির দুর্গাপুজোর আয়োজনের অন্যতম মাথা ছিলেন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে জিতে বিধায়ক হন। ভোটের ফলপ্রকাশের এক মাসের মধ্যেই পুত্র সহ তৃণমূলে ফিরে যান মুকুল রায়।

লকেট চট্টোপাধ্যায়- বেশ কিছু দিন ধরে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থান নিয়ে জল্পনা চলছে। কিন্তু নিজের অবস্থান সোশ্যাল মিডিয়ায় স্পষ্ট করে লকেট জানিয়েছেন তিনি বিজেপিতে রয়েছেন। ২০২০তে বিজেপির দুর্গাপুজোর আয়োজনের সময়েও তিনি ছিলেন। কিন্তু ইদানিং তাঁকে খুব একটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। 

বাবুল সুপ্রিয়- আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ২০২০ সালে বিজেপির দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানে গানও গেয়েছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করে হেরেছিলেন টালিগঞ্জ আসনে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বাবুলকে। তারপরেই সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দেন তিনি। দিন কয়েক আগে তৃণমূলে যোগ দেন বাবুল সুপ্রিয়।

অগ্নিমিত্রা পাল- আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক। ২০২০ সালে বিজেপির দুর্গাপুজোর আয়োজনের সময়ে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন তিনি। দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।

সব্যসাচী দত্ত- বিজেপির দুর্গাপুজোর আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সব্যসাচী দত্ত। বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান গেরুয়া শিবিরের টিকিটে। হারের পর থেকেই দলে খুব একটা সক্রিয় নন তিনি। তবে মাসখানেক আগেই বিজেপির দুর্গাপুজো করা উচিত বলে জোর সওয়াল করেছিলেন সব্যসাচী। 

বিজেপির দুর্গাপুজো ২০২০ সালে। ছবি-পিটিআই

তবে ২০২০ সালে শুধুমাত্র যে বিজেপি EZCC-তে দুর্গাপুজো আয়োজন করেছিল, তা নয়। রাজ্যের প্রচুর ছোট-বড় দুর্গাপুজোর উদ্ভোধন করেছিলেন বিজেপি নেতারা। কলকাতা বড় বড় দুর্গা মণ্ডপগুলির সামনে স্টলও দিয়ে রাখে রাজনৈতিক দলগুলি। বিশেষত, শহরের বড় বড় দুর্গাপুজোগুলির সঙ্গে জড়িত রয়েছে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরাও। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একডালিয়ায় দেখা যায় পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে, চেতলা অগ্রহীতে দেখা যায় পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে, সুরুচি সংঘের পুজোয় দেখা যায় বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে, শ্রীভূমিতে পুজোয় থাকেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, হিন্দুস্তান পার্কের পুজোয় দেখা যায় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। 

কী বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক

এ বিষয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক দীপন মজুমদার বলেন, "কলকাতার বড় বড় দুর্গাপুজোর ক্লাবগুলো তৃণমূলের হাতে রয়েছে। ২০২০ সালে যখন বিজেপি দুর্গাপুজো করেছে, তখন আমার মনে হয় এ বছর সেই দুর্গাপুজো করা উচিত। এতে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু যদি বিজেপি পুজো না করে, তাহলে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে যে বিধানসভা নির্বাচনে ভোটে জেতার জন্যই পুজো করেছিল। বিজেপির সামনে সুযোগ রয়েছে, যে দুর্গাপুজো শ্রী রামচন্দ্র শুরু করেছিলেন, যা আমাদের হয় শরৎকালে, সেই পুজো করে দেখানোর। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি যে ভাবে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন বাগবাজারে, সেভাবে যদি বিজেপিও বাংলাতে এভাবে দুর্গাপুজো করে, তাহলেত তাদেরই লাভ হবে। না করলে কিন্তু বিজেপিকে নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।"

Advertisement

Advertisement