কলকাতার যে কয়েকটি বনেদি বাড়ির পুজো দেখতে ভিড় উপচে পড়ে, সেই তালিকায় হয়তো সবার প্রথমে থাকে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো। দুর্গাপুজোর চল এই বাড়ি থেকেই প্রথম শুরু হয়। তাই এই পুজোর আলাদাই আকর্ষণ রয়েছে সবর্ত্র। এই বছর শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো পা দিল ২৩৬ বছরে। সাবেকি এই দুর্গাপুজো পরতে পরতে রয়েছে বনেদিয়ানার ছাপ। সোমবার ২৩ অক্টোবর নবমী, আর তারপরেই মায়ের বিসর্জন। আর শোভাবাজার রাজবাড়ির বিসর্জনে রয়েছে একেবারে অন্যরকম বৈশিষ্ট্য।
বিসর্জনের রীতি
শোভাবাজার রাজবাড়ির বিসর্জনেও রয়েছে বিশেষত্ব। শুভদীপ কৃষ্ণ বলেন, 'দশমীর দিন দুপুরের মধ্যেই মায়ের বিসর্জন হয়ে যায়, বিসর্জনের আগে প্রথা অনুযায়ী নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানোর নিয়ম থাকলেও তা সরকারি বিধিনিষেধের কারণে এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে নীলকন্ঠ পাখির মূর্তি তৈরি করা হয়, সেটায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তার পুজো করা হয়। আর সেটাকে নিয়েই বাড়ির সদস্যরা রওনা হন বিসর্জনের পথে। শুধু তাই নয়, নীলকন্ঠ পাখির সঙ্গে ঘোড়ার প্রতীকি হিসাবে ছোলার পুজোহয়। কারণ মা রওনা দিচ্ছেন বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর ঘরের পথে, সেখানে সৈন্য-সামন্ত সবাইকে নিয়ে যাচ্ছেন, তাই তলোয়ার ও ছোলার পুজো করা হয় বিসর্জনের আগে। যাতে মা নিরাপদে শ্বশুরবাড়ি ফিরতে পারেন।'
বিসর্জনের আগে কনকাঞ্জলি
শুভদীপ কৃষ্ণ এও বলেন, এরপর বড় হাঁড়িতে জলে তিরকাঠির মধ্যে দিয়ে আমরা সবাই মায়ের প্রতিবিম্ব দেখি, সেটা একটা প্রথা আছে আমাদের। দশমীর পুজোর আগে কনকাঞ্জলি প্রথাও রয়েছে, রুপোর থালাতে সোনার গিনি দিয়ে দেবীকে কনকাঞ্জলি দেওয়া হবে। এরপর মাকে কাঁধে করে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাই। যেহেতু মাকে কাঁধে বহন করেন রাজবাড়ির সদস্যরা তাই সেই কাঁধ কোনও শবদেহ বহন করে না। কেউ মারা গেলে হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে যায় তাঁরা। এরপর মাকে নিয়ে গঙ্গার ঘাটেযাওয়া হয়। সেখানে দুটো নৌকায় মাঝে মাকে রেখে মাঝ গঙ্গায় গিয়ে তাঁকে বিসর্জন দেওয়া হয়।