বাংলাদেশের পুজো মণ্ডপগুলিতে ঝুলিয়ে রাখতে হয় নামাজের সময়সূচি। একটি ছবি পোস্ট করে এমনই অভিযোগ করলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুর্গমণ্ডপে ঝোলানো রয়েছে নামাজের সময়সূচি (এই ছবির সত্যতা যাচাই করা হয়নি)। লেখিকার দাবি, মুসলমানদের হুমকি, তাদের ধমক, প্রহার, দাঙ্গা,মূর্তি ভাঙ্গার ভয়ে এই পুজোর সময়ও মণ্ডপে নামাজের সময়সূচি টাঙিয়ে রাখতে বাধ্য হয় হিন্দুরা। যদিও অনেকের দাবি, এই ছবি বেশ কয়েকবছর আগের। আর তাই ফের পোস্ট করেছেন তসলিমা নাসরিন।
এই পোস্টে একাধিক প্রশ্নও তুলেছেন তসলিমা। হিন্দুদের কোন মন্দিরে কী পুজো হবে, কই তা তো কোনও মসজিদে লেখা থাকে না!তাঁর দাবি, হিন্দুরা যদি চাইতো মণ্ডপে নামাজের সময়সূচী রাখতে, তাহলে ভারতের দুর্গা মণ্ডপগুলোয় সেই সময়সূচী থাকতো। কিন্তু কোনও একটি মণ্ডপেও তা নেই।
পোস্টে ঠিক কী লিখেছেন তসলিমা ? লিখেছেন, 'বাংলাদেশের পূজা মণ্ডপে ঝুলিয়ে রাখতে হয় নামাজের সময়সূচী। সত্যিই কি কোনও হিন্দু চায় এই সময়সূচীটা তাদের দেব দেবীর সামনে ঝুলিয়ে রাখতে? চায় না। কিন্তু বাধ্য হয়। কারা তাদের বাধ্য করছে এই কাজে? মুসলমানরা, তাদের হুমকি, তাদের ধমক, তাদের প্রহার, তাদের দাঙ্গা, তাদের মূর্তি ভাঙ্গা! যদি হিন্দুরা চাইতো মণ্ডপে নামাজের সময়সূচী রাখতে, তাহলে ভারতের দুর্গা মণ্ডপগুলোয় সেই সময়সূচী থাকতো। কিন্তু কোনও একটি মণ্ডপেও এটি নেই। বাংলাদেশের কোনও মসজিদে কি হিন্দুদের কোন পূজা কবে, তার কোনও ক্যালেণ্ডার টাংগানো থাকে? থাকে না। এর মানে সংখ্যায় বেশি হলে সে রাজা, সংখ্যায় কম হলে সে প্রজা, যাকে রাজার অত্যাচার সইতে হবে। সভ্য দেশে কিন্তু সবার, সংখ্যায় কম হোক বা বেশি হোক, অধিকার সমান। বাংলাদেশের সভ্য হতে আর কত হাজার বছর দেরি কে জানে।'
এদিকে তসলিমার পোস্টকে সমর্থন করে অনেক কমেন্ট পড়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করেছেন নেটিজেনদের একাংশ। একজন লিখেছেন, 'আবার এরাই নাকি বলে ও দেশে হিন্দুরা খুব ভালো আছে, স্বাধীনভাবে আছে!ইসলাম শান্তির ধর্ম, কারো উপর জোর জুলুম করে না, শুধু ভিন্ন ধর্মের স্থানে গিয়ে নিজের ধর্মের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়।'
আর এক জনের মতে, 'দূর্গা পূজোর কয়দিন আজানের সময় লাউড স্পিকার বন্দ্ধ করা হোক আর পুজো মণ্ডপের ঢাক তথা মঙ্গল বাদ্য লা উড স্পিকার ছাড়া করা হোক ।
আমাদের ভারতে আজানের ধ্বনি এবং পুজোর মঙ্গল বাদ্য একসাথেই ধ্বনিত হয় ।
বিবিধতার মাঝে মিলন এবং ঐক্য ভারতীয় বৈশিষ্ট্য । নিকৃষ্ট মনোবৃত্তি কে ভারতের
জনগণ সকল সময় নাকচ করে ।শব্দ দূষন রোধ করতে লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।'
আবার কারও কারও মতে, বাংলাদেশ শুধু নয়, সব দেশেই সংখ্যালঘুদের প্রতি এভাবেই সংখ্যাগুরুরা আক্রমণ করে থাকে। তিনি কমেন্টে লিখেছেন, 'শুধু বাংলাদেশে নয়। বিশ্বের সব দেশেই সংখ্যালঘুদের অবস্থান ভাল নয়। ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের নানা সমস্যার সন্মোখিন হতে হয়। একেক দেশে একেক রকম কায়দা। আমি যেখানে আছি এখানেও সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার প্রতিদিন। কায়দা ভিন্ন। চিপা মাইর জাতীয়। সব দেশের মানুষ যখন প্রকৃতই সভ্য হলে , এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব হত। মসজিদে নামাজের সময় সূচি ঝুলিয়ে রাখা মানষিক নির্যাতনের একটি নমুনা। সকল ধর্মের ধার্মিক গণ সভ্য হোক সেই প্রত্যাশা করি। আপনাকে পুজোর শুভেচ্ছা।'