উৎসব শেষ। কড়া নিরাপত্তায় প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়েছে গঙ্গার ঘাটে ঘাটে। বিকেল থেকে ঘাটগুলি ঢাকের আওয়াজে মুখর হয়ে ওঠে। বিষাদের মধ্যেই সকলের মুখে একই কথা, ‘‘আসছে বছর আবার হবে।’’
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পর্ব চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। সোমবার রাত থেকেই যৌথ ভাবে তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন পুরসভা, কলকাতা পুলিশ ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। খিদিরপুরের দহিঘাট, বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট, কুমোরটুলি, বাজাকদমতলা ঘাটে সব বন্দোবস্তে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এই ঘাটগুলিতেই সবচেয়ে বেশি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাবুঘাটের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে এসেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম (ববি)। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বারের মতো এ বারও গঙ্গার ঘাটগুলি থেকে প্রতিমার কাঠামো তোলার জন্য পুরসভার তরফে ক্রেন রাখা হয়েছে। যাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ মতো প্রতিমা বিসর্জন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাঠামো জল থেকে তুলে ফেলা যায়। এ ছাড়াও লাইফবোট, পর্যাপ্ত আলো ও বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এই চার দিন বিসর্জন ঘিরে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য গঙ্গার প্রতিটি ঘাটের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, শহরের বিভিন্ন পুকুরের ঘাটেও আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মোতায়েন থাকছে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে কলকাতা পুরসভাকে জানানো হয়েছে, এ বার প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় গঙ্গায় নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করা হবে তাদের তরফে। কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি তারাও এ বার ৫০টি লাইফবোট নামাবে গঙ্গায়।
লালবাজার জানিয়েছে, শহরে মোট বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা ২৭৫৭টি। এর বাইরে, প্রায় এক হাজারের মতো রয়েছে বিভিন্ন বাড়ির পুজো। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য গঙ্গার ২৪টি ঘাট-সহ মোট ৬৮টি ঘাট নির্দিষ্ট করা হয়েছে। দশমীতে বড় কোনও ক্লাবের প্রতিমা বিসর্জন না হলেও ছোট ছোট ক্লাব এবং বাড়ির প্রতিমা জলে পড়েছে বা পড়বে। প্রতিটি ঘাটে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে নৌকা নিয়ে থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এ ছাড়াও, রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের জেটিতে প্রস্তুত থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দু’টি অতিরিক্ত দল। এর পাশাপাশি, ঘাটগুলিতে স্বেচ্ছাসেবকেরাও থাকবেন। ডিসি পদমর্যাদার অফিসারদের ওই ঘাটগুলির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অধীনে থাকছেন একাধিক এসি এবং ওসি পদমর্যাদার অফিসার।
এ ছাড়া গঙ্গার ঘাটগুলিতে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে নির্বিঘ্নে প্রতিমা নিরঞ্জন করা যায়। এ ছাড়াও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনারদের উপরে ঘাটের নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্ব থাকছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন ঘাটে ক্যামেরার নজরদারির সঙ্গে নজর-মিনার থেকেও পরিস্থিতির উপরে লক্ষ রাখা হবে। বিসর্জনকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ পুলিশ পিকেট থাকছে। যার নেতৃত্বে থাকছেন সহকারী নগরপালেরা। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ওই পুলিশ পিকেট থাকবে বলে জানা গিয়েছে।