যাদবপুরের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এবার শুরু হল রাজনৈতিক চাপান-উতোর। র্যাগিং নাকি খুন, সেই প্রশ্নের পাশাপাশি পরিস্থিতির দায় নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সামনে আসছে রাজ্য-রাজ্যপাল দ্বন্দ্বও। ঘটনায় সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অন্যদিকে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মনে করিয়ে দিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আচার্য তথা রাজ্যপালের প্রভাব অনেক বেশি। এসবের মধ্যেই মৃত ছাত্রের বাবাকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে রেয়াত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে নিহত স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি জানান, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনার নেপথ্যে যে বা যারাই জড়িত থাক না কেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না।
বুধবার রাত নটা থেকে সাড়ে নটার মধ্যে স্বপ্নদীপ শেষবার বাড়িতে ফোন করেছিল। টেলিফোনে ছেলে তাঁকে জানিয়েছিল, ‘আমি খুব কষ্টে আছি। আমার খুব ভয় করছে। তোমরা তাড়াতাড়ি এসো।‘ মুখ্যমন্ত্রীকে একথাও জানান স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু।
শুক্রবার সকালেই ছেলের মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ। অভিযোগের ভিত্তিতে যাদবপুর থানার পুলিশ ৩০২ ধারায় খুনের মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সূত্রের খবর, ঘটনায় হস্টেলের আবাসিক ১০ থেকে ১২ জন ছাত্রকে জেরা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পাশাপাশি, স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ঘটনায় ১১ সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই কমিটিতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন অধ্যাপক, তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি এবং একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন খোদ রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর মতে, প্রশাসনিক মদত ছাড়া দিনের পর দিন র্যাগিং-এর মতো অপরাধ চলতে পারে না। টুইট বার্তায় সুকান্তর দাবি, ‘প্রশাসনিক মদত ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে টিএমসিপি, এসএফআই, ডিএসএফ-এর মতো ছাত্র সংগঠনগুলো র্যাগিং-এর মতো ঘৃণ্য অপরাধ চালাতে পারে না। স্বপ্নদীপকে নিজের প্রাণ দিয়ে তার মূল্য চোকাতে হল।’ মৃত ছাত্রের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
তবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দাবি, শুধুমাত্র রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোই বিজেপির একমাত্র উদ্দেশ্য। পাল্টা জবাব দিয়ে আচার্য সি ভি আনন্দ বোসকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ব্রাত্য লিখেছেন, ‘যে কোনও ঘটনাতেই রাজ্য সরকারের দোষ খুঁজে পাচ্ছে বিজেপি। গাছের পাতা নড়লেও রাজ্যের দোষ। সরকারের ওপর দোষ চাপানোর তাড়ায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি ভুলে গিয়েছেন যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এখন সরাসরি আচার্যের অধীনে রয়েছে। এই ঘটনা আসলে রাজ্যপালের ব্যর্থতা।’