হিন্দু ধর্মে কৌশিকী অমাবস্যার আলাদাই গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিবছর এই দিনটিকে ঘিরে তারাপীঠে বহু ভক্তের সমাগম হয়। শুধু কলকাতা বা এ রাজ্য থেকেই নয়, দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ তারাপীঠে আসেন এই কৌশিকী অমাবস্যার সময়। এই বছর কৌশিকী অমাবস্যা ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পড়েছে। আর তারাপীঠেও অসংখ্য ভক্তের ভিড় হবে এই সময়। তাই তারাপীঠ যাওয়ার আগে সেখানে কী কী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, কেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা তা এক ঝলকে দেখে নিন।
বীরভূমের পঞ্চপীঠ স্থান এই তারাপীঠেই সাধক বামদেব সিদ্ধি লাভ করেছে। তাই এই ভূমিকে বামদেবের সিদ্ধপীঠ, শক্তিপীঠ বলেও পরিচিত। আর কৌশিকী অমাবস্যায় এই স্থানের গুরুত্ব দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কিছুদিন আগেই তারাপীঠ মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। এইদিন এই স্থানে শুধু ভক্তদের ভিড়ই হয় না, সাধক-সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে অঘোরী বাবাদেরও দেখা মেলে এখানে। কৌশিকী অমাবস্যার আগে থেকেই এখানে ভিড় জমাতে শুরু করে দেন ভক্তরা। সুতরাং এই জায়গার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে জোরদার হবে সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
কৌশিকী অমাবস্যাকে ঘিরে তারাপীঠে তৎপর হয়ে উঠেছেন পুলিশ-প্রশাসন, তারাপীঠ মন্দির কমিটি ও তারাপীঠ উন্নয়ন পরিষদ। তারাপীঠ মন্দিরের সভাপতি তারাময় বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে গোটা মন্দির ঘিরে ফেলা হয়েছে বাঁশ দিয়ে। যাতে মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দর্শনার্থীরা সুরক্ষা সহকারে মায়ের দর্শন করতে পারেন। এইদিন যেহেতু সারারাত ধরে মন্দির খোলা থাকে, তাই রাখা হচ্ছে মেডিক্যাল টিমও। এর পাশাপাশি মন্দিরের গর্ভগৃহও সারারাত খোলা থাকবে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে রামপুরহাটের এসডিপিও জানিয়েছেন যে কৌশিকী অমাবস্যায় আগত ভক্তদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে গোটা মন্দির চত্ত্বর জুড়ে থাকবেন ১৭০০ সিভিক ভলেন্টিয়ার, ১০০০ পুলিশ, ৩৬টির মতো ড্রপ গেট, ২৪ থেকে ২৬টির মতো অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম। এছাড়াও থাকছে সাদা পোশাকে অ্যান্টি ক্রাইম ফোর্স। ওয়াচ টাওয়ারও তৈরি করা হয়েছে। এগুলি বাদে ড্রোনের মাধ্যমেও গোটা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি চালানো হবে।
এমনিতেই কয়েকদিন আগে মন্দির সংস্কার ও ট্রেন চলাচলের সমস্যা থাকার কারণে কিছুটা হলেও ভিড় কমেছিল তারাপীঠে। অনেক ভক্তই তারাপীঠ যাওয়া পিছিয়ে দেন। সব দিক খেয়াল রেখে তারাপীঠ ২৪ ঘণ্টা খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্দির কমিটি। এছাড়াও একাধিক নিয়মে পরিবর্তন এনেছে তারাপীঠ মন্দির কর্তৃপক্ষ। যেমন, পার্কিংজোন নিয়ে নয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাপীঠ মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দির কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, যারা নিজস্ব চার চাকা গাড়িতে আসবেন তারা প্রতি বছরের মতো এই বছরও তারাপীঠ মন্দির থেকে কিছুটা দুরে অবস্থিত চিলার মাঠে গাড়ি পার্কিং করতে পারবেন। তবে সেখানে যদি জায়গা না পাওয়া যায় তাহলে রামপুরহাট সংলগ্ন মন্সুবা মোড়ে নির্দিষ্ট গাড়ি পার্কিংয়ে গাড়ি রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে নিজের গাড়ি নিয়ে গেলেও ভক্তদের মন্দিরে যেতে হবে অটো ভাড়া করে।
সব মিলিয়ে কৌশিকী অমাবস্যাকে ঘিরে সাজো সাজো রব শুরু হয়ে গিয়েছে তারাপীঠ জুড়ে। স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে নাগরিক সকলের মধ্যেই ব্যস্ততা তুঙ্গে। প্রস্তুতিও চলছে জোরকদমে। তারাপীঠ মহাশশ্মান চত্ত্বর জুড়ে তৈরি হয়েছে যজ্ঞ কুণ্ড। এখানেও পুলিশি নজরদারি থাকছে।