ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। মায়ের দায়িত্ব নিতে না চেয়ে বোনের বাড়ি বৃদ্ধা মা'কে রেখে এসেছিল সে। মেয়েও মায়ের দায়িত্ব নিতে চায়নি। তাই, মা'কে উল্টোডাঙায় একটি অটোতে ফেলে চলে গেল। আসলে কেউই বৃদ্ধা মায়ের 'ভার' নিজের কাঁধে নিতে চায়নি। কিন্তু, সেই বৃদ্ধার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন এক অটোচালক।
বৃদ্ধার নাম গৌরী চক্রবর্তী। তাঁর ৩ সন্তান। গত ৬ মাস ধরে বাটকুলাতে মেয়ের বাড়িতে ছিলেন গৌরীদেবী। আজ তাঁকে অটোয় চাপিয়ে উল্টোডাঙায় নিয়ে আসে মেয়ে। অটোচালককে সে বলে, তার মা'কে যেন কেষ্টপুরে নামিয়ে দেওয়া হয়। কেষ্টপুরে গৌরীদেবীর ছেলের ফ্ল্যাট। সেখানেই তাঁকে নামিয়ে দেন অটোচালক সন্তু মণ্ডল। তারপর তিনি চলে আসেন। বৃদ্ধার অভিযোগ, তাঁর দায়িত্ব ছেলে পীযূষ চক্রবর্তী নিতে চায়নি। সে উল্টোডাঙায় আর একটা বোনের বাড়িতে তাঁকে রেখে আসে। কিন্তু, সেই মেয়েটিও মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। নিরুপায় হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন গৌরীদেবী।
সারাদিন এভাবেই এক বাড়ি থেকে আর এক বাড়ি ঘুরতে থাকেন গৌরীদেবী। অবশেষে রাস্তায় ঠাঁই হয় তাঁর। বিকেলের দিকে উল্টোডাঙ্গা অটোস্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন বৃদ্ধা। সেই সময় ওখানেই ছিলেন সন্তু মণ্ডল। তিনি বৃদ্ধাকে দেখে চিনতে পারেন। কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করেন। গৌরীদেবী সব কথা খুলে বলেন সন্তুবাবুকে।
সব কথা শুনে বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ান ওই অটোচালক। তিনি বাগুইহাটি থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। তাদের তরফে গৌরীদেবীকে কেষ্টপুরে তাঁর ছেলের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। পুলিশকে দেখে মা'কে ফ্ল্যাটে ঠাঁই দেন পীযূষ চক্রবর্তী। তবে বৃদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে আটক করে।
গৌরীদেবীর অভিযোগ, তিনি প্রায় ৬ মাস ধরে মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। ছেলে সেই খবর পেয়েও একবার দেখতে আসেনি। আজ সকালে তিনি যখন কেষ্টপুরে ছেলের ফ্ল্যাটে যান, তখন তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বৃদ্ধার কথায়, 'ছেলে আমাকে বলে আমি নাকি ওদের ঘর ভাঙছি। আমি তখন বলি, তাহলে এখন আমি কোথায় যাব? ৩ সন্তানের মধ্যে কেউ আমার দায়িত্ব নেবে না? অথচ আমার ছেলে যে ফ্ল্যাটটা কিনেছে সেটা আমার কাঁচড়াপাড়ার বাড়ি বিক্রির টাকায়। ছেলে আমাকে আর এক মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সেও আমাকে রাস্তায় রেখে চলে যায়। তখন ওই অটোচালক আমাকে সাহায্য করে।'
ঘটনা নিয়ে অটোচালক সন্তু মণ্ডল বলেন, 'সকাল ভদ্রমহিলাকে কেষ্টপুরে নামিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। বিকেলে দেখি রাস্তায় কাঁদছেন। আমি জিজ্ঞেস করাতে উনি সব বললেন। তখন আমি থানায় খবর দিই। পুলিশ এসে বৃদ্ধাকে তাঁর ছেলের বাড়িতে রেখে আসেন।'