ভবানীপুরের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল বৃদ্ধ দম্পতির রক্তাক্ত দেহ। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছে ওই দম্পতিকে খুন করা হয়েছে। মিত্র ইন্সটিটিউটের পাশে ৭৩ এ হরিশ মুখার্জি রোড এই ঘটনাকে ঘিরে এখন চা়ঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহরের বুকে। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই ঘটনার তদন্ত ইতিমধ্যে শুরু করেছে পুলিশ। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান শহরের মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
সোমবার সন্ধ্যায় হরিশ মুখার্জি রোডের ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁদের ফ্ল্যাটের ভিতরে আলমারি খোলা ছিল। দু'জনের শরীরেই ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গিয়েছে। তা থেকে প্রাথমিকভাবে অনুমান, লুঠপাটে বাধা দেওয়ায় খুন করা হয়ে থাকতে পারে। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও কলকাতা পুলিশের তরফে কিছু জানানো হয়নি। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, স্থানীয় কাউন্সিলর কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল। বলেন, ‘পুলিশ তদন্ত করছেন। সম্ভবত কেউ ঢুকে গুলি করেছে। তবে সেটা নিশ্চিত নই। পুলিশকে তদন্ত করতে দিন। অপরাধী গ্রেফতার হবেই। অপরাধী পালাতে পারবে না।’ স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ কাজরী ন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মৃত দম্পতির কয়েকজন পরিজন জানিয়েছেন বাড়ি থেকে কয়েকটি গয়না উধাও রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত স্বামীর নাম অশোক শাহ। তিনি পেশায় শেয়ার মার্কেটের কর্মী। স্ত্রী রেশ্মিতা শাহ গৃহবধূ ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে ভবানীপুরের বাসিন্দা ছিলেন ওই দম্পতি। তাঁদের তিন মেয়ে। তারমধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক মেয়ে থাকতেন বাবা-মার সঙ্গেই। এদিন সন্ধে ছটা নাগাদ বাইরে থেকে বাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বাবা-মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান মেয়ে। এখনও পর্যন্ত যে-টুকু তথ্য সামনে এসেছে, তার থেকে জানা যাচ্ছে, স্বামীর বুকে বুলেটের চিহ্ন রয়েছে। স্ত্রীকে ছুরি বা অন্য কোনও ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। দুটো দেহ আলাদা-আলাদা ঘরে পড়েছিল। অশোক শাহের দেহ ছিল ড্রয়িং রুমে, ভিতরের ঘরে পড়েছিল স্ত্রী রশ্মিতা শাহের দেহ।
অশোক শাহের মেয়ে বিকেলে ক্রিকেট খেলে ফিরে এসে দেখেন, তাঁর বাবা-মা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছেন। আলমারি খোলা। একজনের দেহ ঘরের ভিতরে। অন্য দেহটি পড়ে ছিল দরজার সামনে। গুলি করে, চাকু দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়ে থাকতে পারে ভবানীপুরের গুজরাতি দম্পতিকে। প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। লুঠের কারণেই এই খুন, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। মৃতার হাতে বালা ও গলার হার খোয়া গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যায়, ভবানীপুরে বাড়ি থেকে দুজনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের পর তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ এবং গোয়েন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, দেহ দুটি যেখানে মিলেছে তার থেকে ৪০০ মিটার পর্যন্ত পুলিশ কুকুর গন্ধ শুঁকে পৌঁছে গিয়েছে । ৪০০ মিটার এর পর কুকুরের অবস্থান না বদলানো খুনের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজটা এখান থেকেই শুরু করতে চাইছেন পুলিশ কর্তারা। প্রাথমিক তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।