গত ১২ দিন ধরে কলকাতা উত্তাল। আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পুরো শহর নড়ে বসেছে। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও সুবিচার এখনও অধরা। ২২শে আগস্ট পার হলেও, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি, তদন্ত চলছে ধীর গতিতে। এই বিচারহীনতায় ক্ষোভ বাড়ছে শহরজুড়ে। তাই এবার প্রতিবাদ আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ডাক তুললেন রাত দখলের ডাক দেওয়া প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া ও গবেষক রিমঝিম সিনহা।
তাঁর আবেদন, আগামী রবিবার, ২৫শে আগস্ট, কলকাতা শহরকে এক নতুন রূপে দেখা যাবে। বাড়ির ছাদ, পাড়া, ক্লাব—যেখানে পারা যায়, সেখানেই উড়বে বেগুনি পতাকা। এই বেগুনি পতাকা নারী আন্দোলনের প্রতীক। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন, সবাই একযোগে এই পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য একটাই—দেখিয়ে দেওয়া যে, নারীর নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে কত শত মানুষ পাশে আছেন।
রিমঝিম বলেন, 'এর আগে আমরা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডান ক্লাবের পতাকা উড়িয়েছি। ফুটবল বিশ্বকাপ এলে উড়িয়েছি ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার পতাকা। কিন্তু এবার উড়বে নারীদের পতাকা। একটি সমাজ যেখানে নারীর সুরক্ষা এখনও নিশ্চিত নয়, সেখানে এই উদ্যোগ এক বড় পদক্ষেপ।'
রিমঝিম ও তোর্সাদের দাবি, এদিন সকলে পতাকায় লিখবেন "#মেয়েরা_রাতের_দখল_নাও" এবং "#আর_জি_করের_বিচার_চাই"। এই হ্যাশট্যাগগুলি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়, বাস্তবের পতাকাতেও প্রতিফলিত হবে। এটি শুধু একটি আন্দোলনের প্রতীক নয়, বরং একটি দৃঢ় বার্তা—সকল নারী ও পুরুষের কাছে যে সময় এসেছে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য লড়াই করার।
এই কর্মসূচি শুধু দিনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। রাতে, ১০টা থেকে, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে টর্চ লাইট জ্বালানো হবে। টর্চ এতদিন রাত পাহারার প্রতীক ছিল, কিন্তু এবার এই টর্চ হয়ে উঠবে ‘রাত দখল’ আন্দোলনের প্রতীক। টর্চ লাইটের আলোয় রাতের অন্ধকার দূর করার এই প্রতীকী পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিবাদী মানুষগুলি জানিয়ে দেবেন যে, রাতের অন্ধকারও নারীর নিরাপদ স্থান হতে পারে এবং হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চেতনা আরও জাগ্রত করা এবং আন্দোলনকে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের। এই রবিবার বেগুনি পতাকা এবং টর্চ লাইটের আলোয় কলকাতার আকাশ ভরে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।