বুধবার, টানা ষষ্ঠ দিনে, কলকাতার ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আরজি কর মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। অধ্যক্ষের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। তাই সন্দীপ ঘোষের কাছ থেকে গুরুতর অপরাধের সমস্ত দিক খুঁটিয়ে তদন্ত করতে চায় সিবিআই।
এখন প্রশ্ন উঠেছে সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে
সন্দীপ ঘোষ কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। বুধবারও তিনি সিবিআই অফিসে পৌঁছলেও এখনও নীরব। যে হাসপাতালে ডাক্তারকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিল, সেই হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এখন প্রশ্ন আরও কড়া হচ্ছে।
সরকারকে প্রশ্নও করেছে সুপ্রিম কোর্ট
এরই খপ্পরে পড়ে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। যারা টানা ৬ দিন ধরে সন্দীপ ঘোষকে জেরা করে যাচ্ছে। দ্বিতীয় স্ক্রু হল সুপ্রিম কোর্ট। একদিন আগেই সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছিল আদালত। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট যে গুরুতর প্রশ্নগুলি উত্থাপন করেছে তার উপর সিবিআই ক্রমাগত নজর রাখছে।
সন্দীপ ঘোষকে সন্দেহ করার চারটি প্রশ্ন
জুনিয়র নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে চায় তদন্তকারী সংস্থা। কারণ ঘটনার সময় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। তাঁর ভূমিকা সন্দেহজনক। তাঁর কথা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাই এখন পর্যন্ত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মাধ্যমে সন্দীপ ঘোষের অভিপ্রায় জানতে চায় সিবিআই।
প্রথম প্রশ্ন- ঘটনার খবর পেয়ে কী করলেন?
দ্বিতীয় প্রশ্ন- ঘটনার পর আপনি কার সঙ্গে কথা বলেছেন?
তৃতীয় প্রশ্ন- মৃতদেহ দেখার জন্য পরিবারের সদস্যদের কেন ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করানো হল?
চতুর্থ প্রশ্ন- কার নির্দেশে সেমিনার হলের কাছে সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল?
বুধবার টানা ষষ্ঠ দিন এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে ঘোষকে জেরা করছে সিবিআই। কিন্তু সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন অধ্যক্ষের রেকর্ড করা কিছু বয়ান অন্যদের বয়ানের সঙ্গে মিলছে না। তাই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। এখন তদন্তকারী সংস্থাও তাঁর কল ডিটেইলস এবং চ্যাটের বিবরণ খতিয়ে দেখতে ব্যস্ত। এক দিন আগে, সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে শুনানি করে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে প্রশ্ন তোলে। আদালত জিজ্ঞাসা করে-
প্রশ্ন নং ১- অধ্যক্ষ কি হত্যাকে আত্মহত্যা বলেছেন?
প্রশ্ন নং ২- অভিভাবকদের কি তিন ঘন্টা দেহ দেখতে দেওয়া হয়নি?
প্রশ্ন নং ৩- কেন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এফআইআর নথিভুক্ত করতে দেরি হয়েছিল?
প্রশ্ন নং ৪- ঘটনার পর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কী করছিলেন?
প্রশ্ন নং ৫- কেন তৎকালীন অধ্যক্ষকে অন্য কলেজে যোগদান করানো হয়েছিল?
২২শে আগস্ট স্ট্যাটাস রিপোর্ট দিতে হবে
পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের জিজ্ঞাসার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত কলকাতায় উপস্থিত সিবিআই দল। বিষয়টির তদন্ত চলছে। ২২ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে স্ট্যাটাস রিপোর্টও জমা দেওয়া হবে।
তথ্যপ্রমাণ কারচুপির অভিযোগ
ধর্ষণ ও খুনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় কলকাতা পুলিশ ও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, প্রথমে হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যার রং দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, এমনকি প্রমাণওও নষ্ট করা হয়। পরিবারের সদস্যদের মতে, গোটা ঘটনায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।
রাজ্য সরকারকেও তিরস্কার আদালতের
হত্যার পর পরিবারের সদস্যদের অন্ধকারে রেখেছে মেডিকেল কলেজ প্রশাসন। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ কেন ধর্ষণ ও খুনের মতো গুরুতর মামলাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতার ঘটনা যখন সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়, তখন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, ১৪-১৫ অগস্টের মধ্যবর্তী রাতে ঘটে যাওয়া হিংসা এবং কলকাতা পুলিশের তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সুপ্রিম কোর্টও বাংলা সরকারকে তিরস্কার করেছে।
সন্দীপের বিরুদ্ধে দাবিহীন মৃতদেহ বিক্রির অভিযোগ
সিবিআই তদন্তের সময় সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ উঠেছে। আরজি কর মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট আখতার আলি দাবি করেছেন যে সন্দীপ ঘোষ দাবিহীন মৃতদেহ বিক্রি সহ অনেক বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশে বায়োমেডিকেল বর্জ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাচারে নিয়োজিত ছিলেন।
সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
আখতার আলি ২০২৩ সাল পর্যন্ত আরজি কর হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এই বিষয়ে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছেও অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও প্রাক্তন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগের পর সন্দীপকে বদলি করা হয়
আখতার আলি দাবি করেছেন যে, তিনি ডাঃ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগে একটি তদন্ত রিপোর্টও পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু এর পরে তাঁকে আরজি কর ঘোষণা করে হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করে। তিনি বলেন, 'আমি যেদিন তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি, সেদিনই আমাকে বদলি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্যকেও বদলি করা হয়েছে। এই লোকের হাত থেকে ছাত্রদের বাঁচানোর জন্য আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি।
সন্দীপ ঘোষ নতুন পোস্টিং পেয়েছিলেন
সন্দীপ ঘোষ, যিনি ডাক্তার হত্যার প্রতিবাদের মধ্যে পদত্যাগ করেছিলেন, পদত্যাগের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কলকাতা মেডিকেল কলেজে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে কলকাতা হাইকোর্ট এ নিয়ে সরকারকে তিরস্কার করে সন্দীপ ঘোষকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠিয়েছে।
পাস করাতে ঘোষ ঘুষ চাইতেন
আলী দাবি করেন, ঘোষ মেডিক্যাল পাস করার জন্য ঘুষ চাইতেন। তিনি বলেন, কলেজে কিছু পড়ুয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছিল। যাতে টাকা নেওয়া যেতে পারে।