প্রকাশ বেশি, বিক্রি কম! এমনটাই জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। হই হই করে কলকাতা বইমেলা চলছে। গত দু'তিন বছরের মতো এবারও বহু নতুন 'কবি-লেখকে'র কার্যত ছড়াছড়ি বইমেলায়। কেউ কেউ মজা করে জানাচ্ছেন, বইমেলায় লেখক বেশি, পাঠক কম। এরপর হয়ত পাঠকই খুঁজে পাওয়া যাবে না, সবাই লেখক! আর নতুন লেখকরা নতুন বই হাতে ছবি পোস্ট করছেন ফেসবুকে। প্রশ্ন উঠছে, কারা লিখছেন এত বই, আর কারাই বা ছাপাচ্ছেন? আর সবথেকে বড় প্রশ্ন, সেইসব গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ পড়ছেনই বা কারা? বই প্রকাশ করা কি সস্তা হয়ে গেছে?
"সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।" বলেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, যার ভিতর কবিত্ব আছে, সে কবি। কবি আর কবিতা রচনাকারী এক নয়। কারও ভিতর কবিত্ব না থাকলেও কবিতা রচনা করা তার পক্ষে সম্ভব। তাঁর অন্তর্দৃষ্টি অপ্রচল হলেও গভীর ও সত্যসন্ধানী। কিন্তু গত ক'য়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে, বইমেলা এলেই প্রচুর নতুন কবি-লেখকের বই প্রকাশিত হচ্ছে। তাঁরা কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেন?
বই ছাপাতে কত টাকা লাগে?
দেব সাহিত্য কুটীরের অন্যতম কর্ণধার রূপা মজুমদার বললেন, 'নামী-অনামী বহু প্রকাশনা সংস্থাই এখন এটা করছেন। এতে সংস্থাগুলিরই লাভ। আগে লেখকের পেছনে লগ্নি করতে হত। এখন আর তা করতে হচ্ছে না। লেখকই নিজেই বই ছাপার এবং প্রচারের জন্য অর্থ ব্যয় করছেন। বিক্রি না হলেও প্রকাশনা সংস্থার কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। আর নিজস্ব একটা বই ছাপানোর বাসনা যাদের রয়েছে, তাঁরা সহজেই নিজের বই ছাপাতে পারছেন।'
বিক্রি হচ্ছে?
উত্তরে রূপা বললেন, 'আমার মনে হয় বেশিরভাগেরই বিক্রি হাতে গোনা। লেখক নিজেই সেগুলো বিলি করছেন। তাঁর হয়ত, সেটা করতে ভালো লাগছে। ভাল মানের লেখা তেমন হচ্ছে বলে তো মনে হয় না।'
কত খরচ বই ছাপাতে? রূপার কথায়, 'সেটা নির্ভর করে বইয়ের পাতার সংখ্যা, ফর্মা ইত্যাদির ওপর। তবে এখন ২০ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে বই ছাপিয়ে দেওয়া সম্ভব।'
অসংখ্য 'লেখক-কবি' নিজের বই নিজের টাকায় ছাপাচ্ছেন, কতটা মানসম্মত সেসব লেখা?
দেজ পাবলিশিং-এর অন্যতম কর্ণধার শুভঙ্কর দে (অপু) বললেন, 'বহু লেখকই সমাদৃত হয়েছেন। প্রথমে হয়ত, তাঁর লেখা কেউ ছাপাতে চাননি। কিন্তু নিজে বই ছাপানোর পর সেই লেখা ভালো লেগেছে। ধূসর পাণ্ডুলিপি নিজেই প্রকাশ করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। পাঠকের ওপরে নির্ভর করে। পাঠকের ভালো লাগলেই সেই লেখা সমাদৃত হবে। তবে এর উল্টোটাও আছে।'