কলকাতায় জলের অপচয় রুখতে নতুন সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। শুক্রবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, এবার থেকে নতুন জলের সংযোগে মিটার বসানো হবে। তিনি উত্তর কলকাতার কাশীপুরের ৬টি ওয়ার্ডে জলের মিটার স্থাপন কীভাবে জলের অপচয় কমিয়েছে তা নিয়ে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, 'আমরা ওয়াটার মিটার দিয়ে নতুন জলের সংযোগ দেব। পুরসভা রোজ ৫১৫ মিলিয়ন গ্যালন পানীয় জল উৎপাদন করে। এটি কলকাতা শহরের জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে জলের অপচয় হচ্ছে। আমাদের এটা বন্ধ করতে হবে।'
পুরসভা জানিয়েছে একজনের পক্ষে ১৫০ লিটার জল সারাদিনে সব কাজকর্মের জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত। পুরসভা পানীয় জলের জন্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা খরচ করে৷ জলের জন্য এই বিপুল ব্যয়ের জন্য রাস্তা বা আলোর জন্য বরাদ্দ কমে যায়। ফিরহাদ হাকিম জানান যে ,কাশীপুরে জলের মিটার স্থাপনের একটি প্রকল্পে ১৮,৬৫৫ মিটার ইনস্টল করা হয়েছিল। যা ভাল ফলাফল দিয়েছে। ৫২ শতাংশ জলের অপচয় বন্ধ হয়েছে।
মেয়র আরও বলেন, 'আমরা দেখতে পেয়েছি যে পাঁচজনের একটি পরিবার প্রতিদিন ৩,০০০ লিটার জল খাচ্ছে। আমাদের প্রকৌশলীরা যখন বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাঁরা জলের ট্যাঙ্কে একটি ফুটো দেখতে পান।' পুরসভার আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, জলাধারগুলি থেকে জল উপচে পড়া, বাড়ি এবং অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের স্টোরেজ ট্যাঙ্কে ফুটো এবং এবং পাইপে লিক কলকাতায় জলের অপচয়ের প্রধান কারণ। মেয়র বলেন, জলের অপচয় বন্ধ করতে তিনি কলকাতাবাসীর কাছে ব্যক্তিগত আবেদন জানাবেন।
তবে পুরসভা জানিয়েছে, ওয়াটার মিটার বসানো মানেই জল-কর চালুর ভাবনা, এমনটা নয়। বরং নাগরিক সমাজের অনেকেই জলের অপচয় রুখতে ওয়াটার ট্যাক্স বসানোর কথা বললেও বরাবর তার বিরোধিতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মানুষের উপর পানীয় জলের জন্য নয়া করের বোঝা চাপাতে নারাজ। তাই ওয়াটার মিটার বসানো বাধ্যতামূলক হওয়ার সঙ্গে করের কোনও সংযোগ নেই। বরং জল নষ্ট হওয়া আটকাতেই পুরসভা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কাশিপুর-বেলগাছিয়া অঞ্চলের বেশ কিছু বাড়িতে বসানো হয়েছিল ওয়াটার মিটার। অহেতুক জল নষ্ট হওয়া আটকাতে তা নাকি বেশ কার্যকরী হয়েছিল বলে জানিয়েছিল পুরসভা। জানা গিয়েছিল, আগে যেখানে সরবরাহ হওয়া পরিশ্রুত পানীয় জলের ৫২% নষ্ট হচ্ছিল, মিটার বসিয়ে নজরদারি শুরু করার পর তা নেমে এসেছে মাত্র ১৩ শতাংশে।
মিটার বসানোর আগে টালা ট্যাঙ্ক থেকে কলকাতা পুরসভার এক নম্বর থেকে ছ' নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িগুলিতে মোট ১৮ মিলিয়ন গ্যালন পানীয় জল সরবরাহ করা হত প্রতিদিন। তার মধ্যে ৯ মিলিয়ন গ্যালনেরও বেশি জল নষ্ট হত। কিন্তু ওয়াটার মিটার বসানোর পর অপচয় হওয়া জলের পরিমাণ কমে এসে দাঁড়িয়েছে দু মিলিয়ন গ্যালনে।
মিটার বসানো ছাড়াও এই এলাকায় জল সরবরাহ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়। সরেজমিনে খতিয়ে দেখার পর জানা যায় ব্রিটিশ আমলের পাইপলাইনের বহু জায়গায় ফাটল ধরেছে, যেখান দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে পানীয় জল। এছাড়া বাড়িগুলির ট্যাঙ্কে ফাটল থাকার কারণে সেখান দিয়েও দিনভর চুঁইয়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জল। এরপরেই নতুন করে পাইপলাইন পাতা হয়। সঙ্গে বসানো হয় জল-মিটার। তাতেই অপচয়ের পরিমাণ এক লাফে কমে গেছে।
এই একই প্রজেক্ট এবার কলকাতা জুড়েই চালু করার ভাবনা রয়েছে কলকাতা পুরসভার। বর্তমানে বৈষ্ণবঘাটা, কসবা, পাটুলি, গড়িয়া, যাদবপুর এলাকায় মিটার বসানোর কাজ চলছে। এরপর তা বসানো হবে বেহালায়। ধাপে ধাপে সারা কলকাতা জুড়েই ওয়াটার মিটার বসানো হবে বলে জানা গেছে পুরসভা সূত্রে।