লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ চলল ঘণ্টা দুয়েক। শেষপর্যন্ত নবান্নের সভাঘরে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হল না। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবিতে অনড় রইলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন,' পৌনে পাঁচটা থেকে ৭টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট অপেক্ষা করেছি। আমরা বলেছিলাম, খোলামনে আলোচনা করুন। কথা বলতে বলতে পাঁচটা নতুন কথা সংযোজন হতে পারে। পাঁচটা পুরনো কথা চলে যেতে পারে। কথা বললে সমাধান হয়'। এরপরই মমতা অভিযোগ করেন, এর পিছনে রাজনীতি রয়েছে। তিনি বলেন,'জুনিয়র ডাক্তারদের বাইরে থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল যে বৈঠকে যাবেন না'। মমতা এও জানান, সাধারণ মানুষের স্বার্থে তিনি পদত্যাগ করতেও রাজি আছেন।
কেন লাইভ স্ট্রিমিং করা গেল না? বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন বলেই জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মানা সম্ভব হল না বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়,'লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যাপারে আমার কোনও আপত্তি নেই। আমরা চিঠিতেও লিখেছিলাম, লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারব না। কিন্তু পুরোটাই রেকর্ডিং হবে। তাঁরা যে কোনও ইস্যু তুলতে পারতেন, তারপর সাংবাদিকদের বলতে পারতেন। যাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে স্বাস্থ্য পরিষেবা সচল হতে পারে। আমরা একবার লাইভ স্ট্রিমিং করেছিলাম। তখন সিবিআই বা সুপ্রিম কোর্টের হাতে মামলাটি ছিল না। ৩টি ভিডিও ক্যামেরা রেখেছিলাম। তাঁরা চাইলে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে শেয়ারও করতাম। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, সিবিআই তদন্ত করছে, তারা লাইভ করতে পারে। মিডিয়া ট্রায়াল করতে পারে না। যেহেতু মামলাটি এখনও বিচারাধীন আছে, ১৭ তারিখ শুনানি। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনে লাইভ স্ট্রিমিং করিনি। ভিডিও রেকর্ডিং তাঁদের দিতাম, দরকারে আদালতকেও দিতাম'। l
মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না: মমতা
জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে বহু মানুষই পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে মনে করিয়ে দেন মমতা। বলেন,'২৭জন মারা গিয়েছে, ৭ লক্ষ মানুষ পরিষেবা পায়নি, ৩২ দিন হয়ে গেল। দেড় হাজার গুরুতর কেস, যাদের হার্ট অ্যাটাক, তারা ৩২ দিন ধরে অপেক্ষা করছে। এতগুলি মানুষের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। ৩৫টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করেছি'।
পদত্যাগ করতে রাজি: মমতা
মমতা বলেন,'ওরা অনেকেই আলোচনায় রাজি ছিলেন। বাইরে থেকে ২-৩ জনের কাছ থেকে নির্দেশ আসছিল। তারা নির্দেশ দিচ্ছিল, বৈঠকে যাবেন না। আমাকে অনেক অসম্মান ও অপমান করা হয়েছে। কুৎসা ও অপপ্রচার হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সাধারণ মানুষ জানতেন না এটার মধ্যে রং আছে! মানুষ এসেছিলেন,বিচার চাইতে। আশা করি মানুষ বুঝতে পারছেন, ওরা বিচার চায় না, ওরা চায় চেয়ার। আমি মানুষের স্বার্থে নিজে পদত্যাগ করতে রাজি আছি। আমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাই না। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি'।
৩ দিন অপেক্ষা করেছি: মমতা
মমতা আরও বলেন, 'এর আগে দুদিন, গতকাল ও পরশু অপেক্ষা করেছি আরও ২ ঘণ্টা। আমরা ৪টে ৪৫ মিনিটে আসতে বলেছিলাম প্রতিনিধিদের। দেরি করে এসেছিলেন। তাতেও কিছু মনে করিনি। কারও এটা ছোট-বড়োর ব্যাপার নয়। ৩ দিন অপেক্ষা করছি। বাংলার মানুষের আবেগ আছে। বাংলার মানুষের সহানুভূতি আছে, যাতে নির্যাতিতা পরিবার বিচার পাক। মামলাটি আমাদের হাতে নেই। সিবিআই তদন্ত করছে বলে আমি সিবিআই সম্পর্কেও কোনও মন্তব্য করব না। আজকে আলোচনা ছিল, ডাক্তারদের সুরক্ষা, পরিকাঠামো। কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে সিবিআই-কে জানাতেই পারে। আমরা বলেছিলাম, আপনারা ১৫ জন আসবেন। তারপরও তাঁরা ৩৪ জন এসেছেন। আমরা কাউকে আটকাইনি। কিন্তু তাঁরা সভাঘরে ঢুকলেনই না। কিন্তু যে কারণে ঢুকলেন না, সেটা সাংবাদিকদের বলতে পারতেন। দু-আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি'।