রাত পোহালেই পশ্চিমবঙ্গে ৪টি বিধানসভায় উপনির্বাচন। তার মধ্যে অন্যতম কলকাতার মানিকতলা কেন্দ্রের ভোটও। ভোটের ঠিক আগের দিন মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবের (Kalyan Chaubey) বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ফোনালাপের অডিও প্রকাশ করে দাবি করলেন, মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে তাঁকে ভোটে জিততে সাহায্য করার বিনিময়ে ঘুষ দিতে চেয়েছেন। কল্যাণ চৌবের পাল্টা দাবি, কোনও ঘুষ দিতে চাইনি। কুণাল ঘোষই বরং সপ্তাহ দুয়েক আগে বিজেপি-তে যোগ দিতে চেয়ে তাঁর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন।
'আমাকে রাত সাড়ে ১১টায় ফোন করেছিলেন কল্যাণ'
এদিন কুণাল ঘোষ একটি অডিও প্রকাশ্যে আনেন। কুণালের দাবি, রাত সাড়ে ১১টায় ফোন করেছিলেন কল্যাণ চৌবে। আমাকে ভোটে অন্তর্ঘাতের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিনিময়ে খেলার জগতে রাজ্য বা জাতীয়স্তরে বড় পদের প্রস্তাবও দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। কুণালের কথায়, 'মানিকতলা উপনির্বাচনে ৪ সদস্যের যে কোর কমিটি তৈরি করেছেন, আমি তার সদস্য। নির্বাচন পরিচালনায় এই কমিটির আহ্বায়ক আমি। আমাকে ফোন করছেন মানিকতলা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে। গণতন্ত্রে সৌজন্যমূলক সহযোগিতা চাইতেই পারেন। কিন্তু একথা সেকথার পর তিনি আমায় বলছেন, আমি যদি তাকে সাহায্য করি, তিনি আমায় খেলার জগতে রাজ্য বা জাতীয় স্তরে বড় পদ দেবেন। আমি এখন মোহনবাগানের সহসভাপতি। তিনি ভেবেছিলেন, আমাকে বড় পদ দিলে দলে অন্তর্ঘাত করান যাবে। এটা অত্যন্ত কুরুচিকর, নিম্নমানের, সংকীর্ণ, বাজে মানসিকতা। প্রতিপক্ষের কাছে সহযোগিতা চাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘুষ দেওয়ার প্রবণতা। মনে রাখবেন, কেন্দ্রীয় সরকার আমায় টেলিফোন অ্যাডভাইজারির চেয়ারম্যান করেছিল। আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। বিজেপি-র এই হাল, গো হারা হারবে। প্রার্থী ঘুষ দিতে চাইছে। এটা তো ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা।' কুণাল ঘোষের বক্তব্য, 'এই অডিও-র তদন্ত হোক। এটা কী ধরনের রাজনীতি? নির্লজ্জ-বেহায়া কল্যাণ চৌবে ভোটে হারছেন বুঝতে পেরে সংকীর্ণ-নীচ রাজনীতি করছেন। ভোটের দু’দিন আগে গভীর রাতে তৃণমূলের আহ্বায়ককে ফোন করছেন উনি। দলের সঙ্গে বেইমানি করার জন্য বড় পদের লোভ দেখাচ্ছেন। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, উনি সিবিআইকে দিয়ে আমাকে ডাকুন। দেখে নিন, এটা কার গলার স্বর।'
'সপ্তাহ দুয়েক আগেই বিজেপি-তে আসতে চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন কুণাল'
এরপরেই পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেন কল্যাণ চৌবে। কুণাল ঘোষ বিজেপি-তে যোগ দিতে চেয়ে তাঁর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। সেই প্রেক্ষিতেই তিনি ফোন করেছিলেন। কল্যাণের কথায়, 'প্রার্থী হিসেবে ভোট চাইতে ফোন করেছিলাম। কোনও ঘুষ দিতে চাইনি। ২০১৯ সালেই উনি বিজেপি-তে আসতে চেয়েছিলেন। বিজেপি কুণালকে নিতে চায়নি। সপ্তাহ দুয়েক আগেই বিজেপি-তে আসতে চেয়ে আমার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন কুণাল। একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। ওটা আংশিক অডিও। পুরো অডিও নয়। আমি অন্যান্য দলের নেতা-নেত্রীদেরও ফোন করেছি। অডিও ক্লিপ এডিট করা হয়েছে। কোনও প্রস্তাব বা ঘুষ দিতে চাইনি। ৭ তারিখ রাত ১১টায় উনি আমায় ফোন করতে বলেছিলেন। আমি যখন জানছি, একটা মানুষ সপ্তাহ দুয়েক পরেই আমারই দলের আসার জন্য এক নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন। আমার দলে আসতে চাইছেন, সেই কারণেই আমি ফোন করেছিলাম। ফোন রেকর্ড করা আমার স্বভাব নয়। পুরো অডিও শুনলে বিষয়টি বোঝা যাবে।'
মানিকতলায় উপনির্বাচন
মানিকতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডে। ওই আসনটিতে বিধায়ক ছিলেন সুপ্তির স্বামী তৃণমূল নেতা সাধন পাণ্ডে। ২০২২ সালে সাধন পাণ্ডে প্রয়াত হওয়ার পর থেকেই আসনটি খালি। অন্যদিকে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ওই আসনে বিজেপি কল্যাণ চৌবেকে প্রার্থী করেছিল। সাধন পাণ্ডের কাছে হেরেছিলেন কল্যাণ।