আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এবার সাংসদ পদ ছাড়ছেন জহর সরকার। জহর সরকার ইতিমধ্যেই সাংসদ পদ ছাড়তে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। সাংসদ পদ ছাড়ার পাশাপাশি রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণাও করেছেন তিনি। সাংসদ পদ ছাড়ার জন্য আরজি কর কাণ্ডে যে জনজাগরণ তাঁকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেজন্য মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি চিঠি লিখেছেন। তিনি কয়েকদিনের মধ্যে দিল্লি গিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্য়ানের কাছে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করবেন বলে জানান।
জহর সরকার ২ পাতার একটি চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়কে। সেখানে তিনি লেখেন, 'আমি অনেক চিন্তা ভাবনার পর স্থির করেছি সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করব এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হব। আমার কখনও কোনও দলীয় পদ বা অন্য কিছুর উচ্চাশা ছিল না। আমি মোদী সরকারের স্বৈরাচারী, বিভেদমূলক, বৈষম্যমূলক ও গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপ ও নীতির স্বার্থহীন ও সুতীব্র সমালোচনা করতে পেরেছি এটাই আমার সন্তুষ্টির কারণ। কিন্তু সংসদে নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পার, যখন ২০২২ সালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর চূড়ান্ত দুর্নীতির খোলাখুলি প্রমাণ দেখে, প্রকাশ্যে মতামত দিই যে দল ও সরকারের এই ব্যাপারে অত্যন্ত সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন, তখন দলের আনক বর্ষীয়ান নেতা আমাকে হেনস্থা করেন। তখন আমি পদত্যাগ করা থেকে বিরত ছিলাম এই আশা নিয়ে যে আপনি কাট মানি ও আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক বছর আগে যে আন্দোলন আরম্ভ করছিলেন, তা চালিয়ে যাবেন।'
এরপরই জহর সরকার আরজি কর প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি লেখেন, ' গত একমাস ধৈর্য্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি আপনি কেন সেই পুরোনো মমতা ব্যানার্জির মতো ঝাঁপিয়ে পাড় সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সাঙ্গ কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে তা এক কথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই জানে রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা আনেক আগেই ফিরে আসাত পারত যদি দুর্নীতিগ্রস্ত এই ডাক্তারদের চক্র ভেঙে দেওয়ার সময়চিৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। এবং যে উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা এই নাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেওয়া হত। আমার বিশ্বাস এই আন্দোলনে পথে নামা মানুষেরা অরাজনৈতিক এবং স্বতস্ফূর্তভাবে এই প্রতিবাদ করছেন। অতএব রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা সমীচীন হবে না।'
আরজি কর কাণ্ডকে সামনে রেখে রাজ্যের বহু মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে বলেও দাবি করেন জহর সরকার। তিনি লেখেন, 'এই আন্দোলনের নামে অবশ্যই বিরোধী দলগুলি নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যে সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও মানুষেরা পথেঘাটে দিনের পর দিন প্রতিবাদ করছেন, তাঁরা এই দলগুলোকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। এঁরা কেউ রাজনীতি পছন্দ করেন না, শুধু একবাকো বিচার ও শাস্তির দাবি তুলছেন। আমরা যদি নিরপেক্ষভাবে এই আন্দোলন বিশ্লেষণ করি, দেখব যে এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র অভয়া-র পক্ষে নয়, রাজ্য সরকার আর শাসক দলের বিরুদ্ধেও।'
জহর সরকার প্রথম ব্যক্তি যিনি সাংসদ পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন। এর আগে সুখেন্দুশেখর রায়ও আরজি কর কাণ্ডে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। তিনি ধরনাতেও বসেছিলেন।