বইপ্রেমীদের কাছে বইমেলা বড় উৎসব। সারা বছর তাঁরা অপেক্ষায় থাকেন আন্তর্জাতিকমানের এই বই-উৎসবের জন্য। ২০২৫ সালের শুরুতেই ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে কলকাতা বইমেলা। শেষ হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। ১২ দিন ধরে চলবে বইয়ের উৎসব। তবে এবারের বইমেলায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে প্রথম থেকেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। ২০২৫ সালে কলকাতা বইমেলায় যে সমস্ত দেশ অংশ নিচ্ছে, তাদের লিস্টে নাম নেই বাংলাদেশের। চলতি বছরে ৪৮ তম বইমেলায় আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়ার উপস্থিতি থাকবে। থাকবে জার্মানি। এই জার্মানিই এবারের বইমেলার থিম দেশ। তবে বাংলাদেশ নিয়ে প্রথম থেকেই নিশ্চুপ গিল্ড। কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে কেন্দ্রের তরফ থেকে কোনও বার্তা এখন মেলেনি বলেই জানান হয়েছে গিল্ডের তরফে।
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার সংগঠক প্রকাশক ও বইসেলার গিল্ড সোমবার বলেছে যে পরের বছর মেলার ৪৮তম সংস্করণে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে কেন্দ্রের থেকে এখনও কোনও বার্তা পাওয়া যায়নি৷ গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশকদের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোনও অনুকূল বার্তা আসেনি, তবে বইমেলার মাঠে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হবে।
গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, “অগাস্ট থেকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা নভেম্বরে পরের বছরের বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে বিদেশমন্ত্রকের মতামত চেয়েছিলাম। বিদেশমন্ত্রক এখনও কোনও অনুকূল প্রতিক্রিয়া দেয়নি।” বাংলাদেশি প্রকাশকরা অংশ নিলে মেলার মাঠে বিক্ষোভ দেখা দিলে গিল্ড কী করবে জানতে চাইলে সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, এটি একটি অনুমানমূলক পরিস্থিতি। “ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যের। আমরা রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করব।”
ত্রিদিববাবু আরও জানান, ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানির কালচারাল ইনস্টিটিউট দ্য গোয়েথে-ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, সে দেশের ২০ জন বিশিষ্ট লেখক ৪৮তম কলকাতা বইমেলায় অংশ নেবেন। জার্মানি হবে ফোকাল থিম কান্ট্রি। এই দেশের প্যাভিলিয়নটি একটি বুকশেলফের মতো হবে ভারত এবং জার্মানির ভাগ করা সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করবে। জার্মানির কনসাল জেনারেল বারবারা ভস বলেন, "বইমেলার কর্তৃপক্ষ জার্মানিকে ফোকাল থিম কান্ট্রি হিসেবে বেছে নেওয়ায় আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত এবং আমাদের রাষ্ট্রদূত ২৮ জানুয়ারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।"
ভস বলেছেন যে জার্মানিতে অধ্যয়নরত ভারতীয় ছাত্রদের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার এবং "আমরা এই সংখ্যা বাড়াতে আগ্রহী।" এবারের বইমেলায় বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশ অংশ নেবে। গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, গত বছরের মতো এবারও স্টলের মোট সংখ্যা এক হাজারের মতো হবে, এ বছর ইংরেজি প্রকাশনার সংখ্যা ১০০ থেকে ১২৫-তে দাঁড়িয়েছে। গিল্ডের সভাপতি বলেছেন যে একটি মোবাইল অ্যাপ দর্শকদের সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলার মাঠে ১,০০০টি স্টলকে খুঁজে পেতে সহায়তা করবে, যা রাজ্যের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেল দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, বইমেলায় বার্ষিক সাহিত্য সম্মেলন ৬-৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে যেখানে সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবেন।
প্রসঙ্গত ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা উদ্বোধন হবে ১৮ জানুয়ারি। শেষ হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। এবছর বইমেলার থিম কান্ট্রি জার্মানি। এছাড়াও বইমেলায় অংশ নেবে ২০টি দেশ। কিন্তু সেই তালিকায় এখনও নেই বাংলাদেশের নাম। এই বিষয়ে সুধাংশুশেখর দে বলেন, "ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত এই বিষয় কিছুই বলতে পারব না।" তবে যদি বাংলাদেশ বইমেলায় অংশ নিতে চায় তাহলে কোনও বাধা থাকবে না গিল্ডের তরফে। এছাড়া এই বছর লিটল ম্যাগাজিন-সহ ছোট, মাঝারি এবং বড় প্রকাশক মিলিয়ে স্টলের সংখ্যা থাকছে ১০০০। গত বছরের সঙ্গে এই বছর স্টলের সংখ্যায় কোনও তফাৎ আসেনি। এছাড়াও মেলায় প্রবেশের জন্য থাকছে ৯টি প্রবেশদ্বার। যার মধ্যে একটি সাজানো হবে, জার্মান সাহিত্যিক গ্যোয়েট এবং অন্য আরেকটি জার্মান ভাষাবিদ ম্যাক্সমুলারের নামে।