কলকাতায় মাত্র ৩টি রুটেই চলছে ট্রাম। বলা যেতেই পারে যে, পরিবেশবান্ধব এবং ঐতিহ্যবাহী এই গণপরিবহণ ব্যবস্থা প্রায় উঠে যাওয়ার মুখে। বিষয়টিতে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানীতে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম।
বুধবার প্রধান বিচারপতি কলকাতার ট্রাম সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বলেন। এবং রাজ্যকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম সংরক্ষণের জন্য একটি "বিশেষজ্ঞ কমিটি" গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে কলকাতা ট্রামওয়েজ কোম্পানিকে আদালতের নির্দেশ- পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনও সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না। রাজ্য সরকারকে কমিটিতে একটি এনজিও এবং রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। রাজ্যকে তিন সপ্তাহ পরে আদালতকে বিষয়টির অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে হবে।
নির্দেশে প্রধান বিচারপতি জানান, একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবহন বন্ধ করা খুব সহজ। তবে শহরের মানুষের অনুভূতির কথা বিবেচনা করে সরকারের উচিত দূষণমুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা সংরক্ষণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। তবে বুধবার সন্ধে পর্যন্ত বেঞ্চের আনুষ্ঠানিক লিখিত আদেশ হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়নি।
আইনজীবী সুলগ্না মুখোপাধ্যায়ের একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন ওই নির্দেশ দেয় আদালত। নির্দেশে বলা হয়, দার্জিলিংয়ে টয় ট্রেন যেভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, তা থেকে রাজ্যের শিক্ষা নেওয়া উচিত। ট্রাম রাজ্যের একটি লাভজনক পরিবহন ব্যবস্থাও হতে পারে।
পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন যে, “ট্রাম "চার বা পাঁচটি রুটে" চলবে। আগের মতো সমস্ত রুটে চালানো "সম্ভব নয়"। সরকার ট্রাম বন্ধ করতে চায় না। কিন্তু সব রুটে ট্রাম চালানো সম্ভব নয়। ট্রামগুলি চার বা পাঁচটি রুটে চলবে। কলকাতার রাস্তার জায়গা খুব কম। সব রুটে ট্রাম চালানো সম্ভব নয়। অনেক জায়গায় রাস্তা সরু।”
বুধবার শুনানি পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুর্ভাগ্যজনক যে রাজ্য ট্রামগুলি সরিয়ে নেওয়ার এবং ধীরে ধীরে কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানির (সিটিসি) সম্পত্তি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবেদনকারীর পক্ষে উপস্থিত আইনজীবী তথ্যের অধিকার (আরটিআই) আইনের অধীনে প্রশ্নের উত্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, শহরে এখনও ১১৬.৬২ কিলোমিটার ট্রাম ট্র্যাক রয়েছে। কিন্তু ট্রামগুলি শুধুমাত্র সেই ট্র্যাকের ৩৩ কিলোমিটারে চলে৷
আগে কলকাতায় শহরে ৬টি বড় ট্রাম ডিপো ছিল। বড়গুলির মধ্যে দুটি কার্যকরী। অন্যান্য ডিপোর জমির সম্পত্তি বেসরকারী সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। সেখানে হাউজিং কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে।
কলকাতায় এখন মাত্র ৩টি রুটে ট্রাম চলে- শ্যামবাজার-এসপ্ল্যানেড, বালিগঞ্জ-এসপ্ল্যানেড এবং বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ। অথচ ২০১৭ সালেও কলকাতার ২৫টি রুটে ট্রাম চলত।