মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই নিজেকে রাস্তার যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত করেছেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁর দল সবথেকে চাপে। ধর্ষণ ও খুনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট যে প্রশ্নগুলি উত্থাপন করেছে, তা তার সরকারের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে। মামলার প্রতিটি মুহূর্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দলের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার বরাবরই নিজেদের সৎ ও জনস্বার্থকামী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। কিন্তু আরজি কর মেডিকেল কলেজে এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর চরম সংকট ডেকে এনেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতে বিভিন্ন দুর্নীতি কেলেঙ্কারির সময় নেতাদের রক্ষা করেছেন এবং জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। তবে এবারের ঘটনা তার সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাসকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্নগুলি সরকার প্রধান হিসেবে মমতার ভূমিকা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, যখন আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষের আচরণ তদন্তাধীন ছিল, তখন কীভাবে তাকে অন্য একটি কলেজে নিয়োগ দেওয়া হল? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশে বলেছে, নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব তাদের সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এটি পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি রাজ্যে, যেখানে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে তার নিজের দলীয় নেতাদের কাছ থেকেও পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন না। তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন নেতারা এই ঘটনার পর দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এমনকি দলের একজন নেতা সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন, যার ফলে তাকে পুলিশের পক্ষ থেকে সমন জারি করা হয়েছে। এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের অভ্যন্তরীণ ভাঙন ও দ্বন্দ্বের প্রমাণ বহন করে।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনগণের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধার করা। যদি তিনি এই মামলাটি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ও সংবেদনশীলভাবে পরিচালনা করতে না পারেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন হতে পারে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে বিভিন্ন মহলে এখন প্রশ্ন উঠছে। তার নিজস্ব সহকর্মী নেতারাও এখন তার প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার রাজনৈতিক অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে, তার বিরুদ্ধে জনমনে ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, যা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।