আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হল থেকে ডাক্তারি ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় এবার এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনল কেন্দ্রীয় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (CFSL) রিপোর্ট। ১২ পাতার এই রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঘটনাস্থল হিসেবে এতদিন যে সেমিনার হলকে ক্রাইম সিন হিসেবে ধরা হচ্ছিল, সেটি আসলে ক্রাইম সিন নয়। এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সেমিনার হলে বা সেখানে পাওয়া ম্যাট্রেসে কোনও ধস্তাধস্তির প্রমাণ নেই। এবং ধর্ষণের কোনও প্রতিরোধের চিহ্নও নেই।
নতুন প্রশ্নের উদয়
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর প্রশ্ন উঠছে— তবে কি অপরাধ অন্য কোথাও সংগঠিত হয়েছিল? যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে সেমিনার হলকে ক্রাইম সিন হিসেবে দেখানোর উদ্দেশ্য কী ছিল? এছাড়াও, ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কি না, তা নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধছে। অপরাধস্থল বদল করে কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছিল কিনা, তা নিয়েও তদন্তকারীদের নতুন করে ভাবাচ্ছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের ৯ আগস্ট সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হলে ওই ডাক্তারি ছাত্রীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ ওঠে ধর্ষণ ও খুনের। কলকাতা পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে এই তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিবিআই।
তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। রিমান্ড লেটারে অভিযোগ করা হয়, অপরাধস্থল সুরক্ষিত রাখতে তারা কোনো পদক্ষেপ করেননি। তাছাড়া, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় যে, সেমিনার হলের ভিতরে অনেক লোকজন ছিলেন, যা প্রমাণ নষ্টের অভিযোগকে আরও জোরালো করে।
কেন্দ্রীয় ফরেনসিক রিপোর্টে নতুন তথ্য
সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরির পি কে মহাপাত্রর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল এই রিপোর্ট তৈরি করেন। এতে সেমিনার হলের ভিতরে ধস্তাধস্তির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ম্যাট্রেসেও কোনো ধস্তাধস্তির চিহ্ন মেলেনি।
পরিবারের অভিযোগ জোরালো হচ্ছে
নির্যাতিতার মা-বাবা প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন যে, সেমিনার হলটি প্রকৃত ক্রাইম সিন নয় এবং ঘটনাস্থল বদল করা হয়েছে। তারা আরও দাবি করেছিলেন যে, ম্যাট্রেসের চাদর বদল করা হয়েছে। সিএফএসএল রিপোর্ট সামনে আসায় তাদের অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে।
হাইকোর্টে নতুন আবেদন
নির্যাতিতার মা-বাবা ইতিমধ্যে ৪২টি প্রশ্ন সামনে রেখে এই ঘটনায় নতুন করে তদন্তের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। তাদের মতে, সঠিক তদন্ত না হলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।
তদন্তের ভবিষ্যৎ
এই রিপোর্ট সামনে আসার পর আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত নতুন মোড় নিতে চলেছে। সেমিনার হল ক্রাইম সিন না হলে, প্রকৃত ঘটনাস্থল কোথায় ছিল এবং কীভাবে অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল, তা খুঁজে বের করাই এখন তদন্তকারীদের মূল চ্যালেঞ্জ।