আরজি কর কাণ্ডে বারবার উঠে এসেছে টালা থানার ওসি-র নাম। তদন্তের স্বার্থে সিবিআইয়ের কাছে বারবার গিয়েওছেন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে প্রথমে ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে শহরের ৪টি নামী বেসরকারি হাসপাতাল। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনা হয়। এই নিয়ে এবার মুখ খুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, ওসিকে ভর্তি নেয়নি, সেইসব হাসপাতালের কথা মনে রাখতে হবে।
নবান্নে এদিন প্রশাসনিক বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে আন্দোলনরত ডাক্তারেরা যে দাবিগুলি পেশ করেছিলেন, সেগুলির মধ্যে সব ক’টি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, 'দয়াকরে আপনারা কাজে যোগদান করুন। যদি আপনাদের কিছু বলার থাকে, সবসময় স্বাগত। আপনারা ৫-১০ জনের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আসুন, আমরা কথা বলতে পারি।'এরপরেই মমতা বলেন,মনে রাখতে হবে ওসি-কে ভর্তি নেওয়া হয়নি। সেইসব হাসপাতালের কথা মনে রাখতে হবে। 'যারা ভর্তি নেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে কী অ্যাকশন', স্বাস্থ্যসচিবকে প্রশ্নও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চারটি (বেসরকারি হাসপাতালের) নাম আমার কাছে রয়েছে। পুলিশের একজন ওসি রোগী হিসাবে গিয়েছিলেন। তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। এই হাসপাতালগুলির কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।” যাঁরা ভর্তি নিতে অস্বীকার করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চাইলে জবাবে স্বাস্থ্যসচিব জানান, কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ইতিমধ্যেই।
সম্প্রতি শোনা যায় বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন টালা থানার ওসি । তাঁকে ৪ টি হাসপাতাল থেকে সুস্থ ঘোষণা করার পর শেষমেষ তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। বর্তমানে সেখান থেকে সরে ভবানীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। আরজি কর কাণ্ড সামনে আসার পর থেকেই প্রশ্নে টালা থানার ভূমিকা। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতার বাবা-মা টালা থানার কার্যকলাপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং অনেক প্রশ্নও তুলেছেন। এবার সেই টালা থানার ওসিকে হাসপাতালে ভর্তি না নেওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি করের নির্যাতিতার পরিবারকে টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়নি বলে এদিন দাবি করেন মুখ্য়মন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন বলেন, 'আর জি কর কাণ্ড নিয়ে কুৎসা চলছে। পরিবারকে কোনও টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়নি। মেয়ের স্মৃতিতে ভাল কাজ করতে হলে বলবেন, এই কথা বলা হয়েছিল। প্রমাণ দিতে হবে কোথায় টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।' প্রসঙ্গত, আজ সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি চলাকালীন রাজ্য সরকার দাবি করে, ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে ২৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ৬ লাখ রোগী নাকি এই সময়কালে চিকিৎসা পাননি। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রায় সাত লাখ রোগী বহির্বিভাগে পরিষেবা পাননি। হাসপাতালে প্রায় ৭০ হাজার রোগীকে ভর্তি নেওয়া যায়নি। সাত হাজারের বেশি পূর্ব পরিকল্পিত অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি।