scorecardresearch
 

Hanuman Chalisa: 'লক্ষ্মীমন্ত' বাংলায় হনুমানের দাপট! ব্রতকথার চেয়েও বেশি বিকোচ্ছে চালিশা

লক্ষ্মীর পাঁচালীর থেকেও কলকাতায় বিক্রি বেড়েছে বাংলা হনুমান চালিশার। প্রকাশকরা ছাপাচ্ছেও বেশি। চলে যাচ্ছে বাংলার সব জায়গাতেই। ফলে, লক্ষ্মীর পাঁচালী, মেয়েদের ব্রতকথা, বিশুদ্ধ নিত্যকর্ম পদ্ধতি, বারোমাসের পাঁচালীর মতো বাঙালির অতি পরিচিত বইগুলিকেও বিক্রিতে ছাপিয়ে গিয়েছে তুলসীদাসের হনুমান চালিশা।

Advertisement
নিজস্ব ছবি। নিজস্ব ছবি।
হাইলাইটস
  • লক্ষ্মীর পাঁচালীর থেকেও কলকাতায় বিক্রি বেড়েছে বাংলা হনুমান চালিশার।
  • প্রকাশকরা ছাপাচ্ছেও বেশি।
  • ফলে, লক্ষ্মীর পাঁচালী, মেয়েদের ব্রতকথা, বিশুদ্ধ নিত্যকর্ম পদ্ধতি, বারোমাসের পাঁচালীর মতো বাঙালির অতি পরিচিত বইগুলিকেও বিক্রিতে ছাপিয়ে গিয়েছে তুলসীদাসের হনুমান চালিশা।

পবনপুত্রের ভক্তিরসে মজেছে আমবাঙালি। এবং রামের একনিষ্ঠ সেবক বানর দেবতার জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। যেকারণে লক্ষ্মীর পাঁচালীর থেকেও কলকাতায় বিক্রি বেড়েছে বাংলা হনুমান চালিশার। প্রকাশকরা ছাপাচ্ছেও বেশি। চলে যাচ্ছে বাংলার সব জায়গাতেই। ফলে, লক্ষ্মীর পাঁচালী, মেয়েদের ব্রতকথা, বিশুদ্ধ নিত্যকর্ম পদ্ধতি, বারোমাসের পাঁচালীর মতো বাঙালির অতি পরিচিত বইগুলিকেও বিক্রিতে ছাপিয়ে গিয়েছে তুলসীদাসের হনুমান চালিশা।

শহরে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, ‘জয় হনুমান জ্ঞান গুন সাগর, জয় কপীস তিহুঁ লোক উজাগর’-এর-মতো চল্লিশটি চৌপাই বা স্তোত্র এখন কণ্ঠস্থ বহু বাঙালির। 

গতবছরই হনুমান চালিশা নিয়ে বিজেপি ও শিবসেনার দ্বন্দ্ব বেঁধেছিল।। মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে হনুমান চালিশা নিয়ে বিতর্ক  বাড়তে থাকে। বিজেপির সঙ্গে ‘সঠিক ‌হিন্দুত্ব’ নিয়েও বিবাদ লেগেছে শিবসেনার। যা এখনও চলছে। এসবের মধ্যে এরাজ্যেও কদর বাড়ছে হনুমান চালিশার। তবে কলকাতার হনুমানভক্তদের মধ্যে সম্প্রদায়গত ধর্মচেতনার চেয়ে ভক্তিভাবই বিক্রির মূল কারণ বলে মনে করছেন কলেজস্ট্রিটের বিক্রেতারা।

আরও পড়ুন

বিক্রি বাড়ছে হনুমান চালিশার।

শুক্রবার কলকাতার কয়েকটি বড় ধর্মগ্রন্থের দোকান এবং প্রকাশনা সংস্থায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিভিন্ন চলতি ধর্মগ্রন্থের মধ্যে হনুমান চালিশার চাহিদা বাড়ছে। ছাপা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। তবে বাংলা অর্থ–সহ সচিত্র বইয়ের চাহিদাই বেশি। সবথেকে কমদামের ছোট বই ছাপায় গীতা প্রেস। শিয়ালদা স্টেশনের গীতা প্রেসের দোকানি পরেশ রাউল বললেন, 'ছোট বইটি তিন টাকা। তারপর ৫ টাকার বই। তারথেকে একটু বড় বইটির দাম সাতটাকা। দারুণ বিক্রি। ছোট হনুমান চালিশাই এপর্যন্ত ৭ লক্ষ ৯৫ হাজার কপি ছাপা হয়েছে।'

পরেশবাবু আরও জানালেন, হনুমান চালিশার পরই বিক্রিতে এগিয়ে গীতা। ৩০-৪০ হাজার অর্ডার আছে। বই দিয়ে কুলোতে পারছেন না।

Advertisement

বইপাড়ার গোপাল বুক কনসার্নের দেবেশ সাহা বললেন, ‘‌লক্ষ্মীর পাঁচালী–সহ অন্য বাঙালি পুজো–পাঠের বইয়ের তুলনায় বিক্রি বাড়ছে হনুমান চালিশার। দিনে চার–পাঁচটা হনুমান চালিশা বিক্রি হয়। সেখানে লক্ষ্মীর পাঁচালীর বিক্রি একটা–দুটো। নতুন করে ছাপানো হচ্ছে না। সেই পুরোনো ধাঁচেই ছাপানো হচ্ছে। অন্যদিকে হনুমান চালিশা ছাপানো হচ্ছে ল্যামিনেশন পেপারে। দামও কম। আর লক্ষীর পাঁচালি, মেয়েদের ব্রতকথার দাম ৬০-৭০ টাকা।'

বৈভব লক্ষ্মীর ব্রতকথা কিনতে এসেছিলেন বেলগাছিয়ার নিশা পোদ্দার। বললেন, 'মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে। তাই বৃহস্পতিবার উপোস করে লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ার চল অনেকটাই কমছে। হনুমান চালিশা পাঠ করতে সময় কম লাগে। যে কোনও সময়েই পাঠ করা যায়। যেকারণেই প্রতি সপ্তাহে লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ে পুজো দেওয়া উঠে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম এখন আর এসবের সময় পায় না। আমি আমার মায়ের জন্য বই কিনছি।’‌ 

লক্ষ্মীর পাঁচালীর বিক্রি কম।

বইপাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ‌শুধু হনুমান চালিশা নয়, বিক্রি বেড়েছে হনুমানের ছবিরও। পঞ্চমুখী পবনপুত্রের ছবির বিক্রি বেশ বেড়েছে।

প্রেসিডেন্সি পাবলিকেশন মূলত ধর্মগ্রন্থ ছাপায়। সেখানকার এক কর্মী জানালেন, তাঁদের বইটি ‘‌শ্রী শ্রী হনুমান চালিশা’‌ সচিত্র। দাম দশ টাকা। বিক্রি ভালই। বহু ভাষাতেই ছাপা হয়। তবে কলকাতায় বিক্রি হয় হিন্দি আর বাংলা। সারা রাজ্যেই বই যায় তাঁদের প্রকাশনী থেকে।

নতুন প্রজন্মের দু'একজন জানালেন, মানুষ হনুমানকে সাধারণত তাঁর সাহস ও শক্তির জন্য পুজো করে। হনুমান বজরঙ্গবলি নামেও পরিচিত, যাঁকে অমর বলে মনে করা হয়। বলা হয়, তুলসীদাস কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় হনুমান চালিশা গেয়েছিলেন। যেখানে তাঁকে ৪০ দিন রাখা হয়েছিল এবং তিনি ৪০টি চৌপাই মন্ত্র পাঠ করেছিলেন।

‌বইপাড়ায় রাস্তার পাশে টেবিল পেতে পত্র–পত্রিকা বিক্রি করেন রমেন দাস। তাঁর দোকানে রয়েছে হনুমান চালিশা থেকে বশীকরণ তন্ত্রসার থেকে একাধিক ধর্ম-কর্মের বই। বললেন, ‘প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়ম করে লক্ষ্মীপুজো এখন আর ক’‌টা বাঙালি বাড়িতে হয়। সবাই ব্যস্ত। তাই কমছে মেয়েদের ব্রতকথা বা নিত্যকর্ম পদ্ধতির মতো বইয়ের বিক্রি। কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে হনুমানজয়ন্তী বা রামনবমী নিয়ে আগ্রহ ইদানিং বাড়ছে। তাই ওইসব বইয়ের বিক্রিও বাড়ছে।
 

Advertisement