সারদা চিট ফান্ড কাণ্ডে বহু মানুষ প্রতারিত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। ঘটনার পর প্রায় দশ বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু এখনও প্রতারিত আমানতকারীদের টাকা সম্পূর্ণভাবে ফেরত দেওয়া যায়নি। কবে ফেরত পাবেন সেই টাকা? আদৌ কি ফেরত পাওয়া যাবে? এমন অনেক দুশ্চিন্তা নিয়েই এখনও দিন কাটাচ্ছেন বহু আমানতকারী। তাঁদের জন্য সুখবর রয়েছে। সেবি অর্থাৎ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর ৬১টি জমির প্লট আগামী ১৭ জুলাই নিলাম করা হবে। প্রাপ্য টাকা মেটানো হবে সারদার ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের। নিলামের জন্য একটি সংস্থাকে নিয়োগ করেছে সেবি।
রাজ্য–রাজনীতিতে বড় কেলেঙ্কারি ছিল সারদা। পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ওড়িশায় সক্রিয় থাকা সারদা গোষ্ঠী এক সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় ১১ লক্ষ আমানতকারীর কাছ থেকে ৪০০০ কোটি টাকার বেশি তুলেছিল। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ওই সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। এবার সেই সারদার সমস্ত সম্পত্তি নিলামে তুলতে চলেছে ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া’ (সেবি)। ওই সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে, শূন্য প্লটগুলির বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্লটগুলির বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। সেটাই সর্বনিম্ন বা বেস মূল্য ধরে নিয়ে নিলাম করা হবে।
সারদা মামলা বহুদিন ধরে আদালতে চলছে। এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শৈলেন্দ্রপ্রসাদ তালুকদারের কমিটির হাতে গোটা বিষয়টি পাঠিয়েছিল। এমনকী সিবিআই, ইডি, রাজ্য সরকার–সহ একাধিক সংস্থার হেফাজতে সারদার যা টাকা–সম্পত্তি আছে সেসব তালুকদার কমিটির হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। আরও আগে সারদা মামলায় ৫০০ কোটির তহবিল গড়ার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনের কাছে রাজ্য ২৮৭ কোটি টাকা প্রতারিত আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়ার জন্য দিয়েছিল। ওই তহবিলে ১৪০ কোটি টাকা এখনও পড়ে রয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) এস পি তালুকদারের কমিটি আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে সারদার একাধিক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে । গত বছর সেপ্টেম্বরে সেবি প্রথমবার জমি নিলাম করে। সেবার মাত্র এক কোটি ২৩ লাখ টাকা উদ্ধার করা গিয়েছিল। তারপর আগামী ১৭ জুলাই ফের নিলাম হতে যাচ্ছে। এই দফায় যে ৬১টি প্লট নিলাম করা হবে সেগুলির বেশিরভাগই দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুই বিষ্ণুপুর, বারুইপুর ও সোনারপুর এলাকায় অবস্থিত।
প্রসঙ্গত পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা মিলিয়ে সারদা সংস্থায় প্রায় ১৭ লাখ মানুষ টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন। এখনও পর্যন্ত তাদের মধ্যে কত আমানতকারী টাকা ফেরত পেয়েছেন সেই হিসাব জানা যায়নি। উল্লেখ্য, সারদা কেলেঙ্কারিতে এখন জেলে রয়েছেন সুদীপ্ত সেন। এই কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের একাধিক হেভিওয়েট নেতাদেরও। তা নিয়ে দীর্ঘ মামলা চলেছে। সারদার লাল ডায়েরি রাজ্য– রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল।